১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণে কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় সেই সড়ক আর নির্মাণ করা হয়নি।
Published : 25 Oct 2024, 12:14 PM
সংযোগ সড়ক না থাকায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর উপর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজ আসছে না। এ কারণে অন্তত পাঁচ ইউনিয়নের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলার বড় বন্দর ভোজেশ্বরের সঙ্গে জপসার সংযোগ স্থাপনে ৯৯ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি।
পরে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণে কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় সেই সড়ক আর নির্মাণ করা হয়নি।
ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নৌকায় করেই চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দূরপাল্লায় যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনে। পাশাপাশি বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
এলজিইডি নড়িয়া উপজেলার প্রকৌশলী শাহাবউদ্দিন খান বলেন, “ভোজেশ্বর-জপসা ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূল ব্রিজের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। দুই বছর আগে অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য একটি টেন্ডার হয়েছিল। জমি জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে পারেনি।”
স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ সালে ১০ কোটি আট লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। শেষ হয় ২০১৮ সালে।
এরপর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। তা ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়নি।
যার ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াতের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নশাসন, জপসা, মোক্তারের চর, ডোমসার, ভোজেশ্বর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। এই ভুক্তভোগীরা দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল বেপারী বলেন, “পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই আমাদের ব্রিজটি নির্মাণ হয়ে গেছে। ব্রিজ নির্মাণ হলে কী হবে, রাস্তা নির্মাণ করেনি সরকার। এ কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক মানুষের হাত-পা ভেঙেছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বাড়ি থেকে বের হতে পারি না।”
শিরীন বেগম বলেন, “ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারি না। প্রতিনিয়ত আমাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়। নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। আমাদের দাবি, ব্রিজটি দিয়ে চলাচলের জন্য দ্রুত রাস্তা নির্মাণ করা হোক।”
মাসুদ আহমেদ পাখি বলেন, “পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে ব্রিজটি পড়ে আছে। আমরা চলাচল করি নৌকায়। মানুষ মালপত্র নিয়ে ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারে না। তাহলে ব্রিজটা করা হয়েছিল কেন?”
নাতি-নাতনিদের মাদরাসায় পৌঁছে দিতে ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদী পার হন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলছিলেন, “যদি নদী পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে তার দায় নেবে কে? দ্রুত রাস্তা নির্মাণের দাবি জানাই।”
সাদিয়া ইসলাম নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, “কিছুদিন পরপর সরকারি লোকজন এসে দেখে যায়। কিন্তু রাস্তার কোনো কার্যক্রম হয় না। মানুষজন যাতায়াত করলে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের বাড়ি-ঘরের উপর গাড়ি উল্টে পড়ে। বাড়িঘর ভেঙে যায়। আমরা চাই, দ্রুত রাস্তাটা নির্মাণ করে দিক সরকার।”
এলজিইডির জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, “ভূমি জটিলতার সমস্যা সমাধান করতে না পারার কারণে এক পর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ওই টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হয়। কিন্তু টেন্ডারটির অনুমোদন করেনি অধিদপ্তর। পরবর্তীতে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
“আশা করছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।”