“জামশেদকে আদালতে তুলে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে ব়্যাব। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷”
Published : 11 Sep 2024, 06:54 PM
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার জামশেদ শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে ব়্যাব৷
বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলম তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশীদ জানান।
এর আগে ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার মিরপুর থেকে ৩৬ বছর বয়সী জামশেদ শেখকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আবু জাফর শেখের ছেলে এবং আজমেরী ওসমানের গাড়ি চালক।
আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা। অভিযোগ রয়েছে, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন আজমেরী। তার ‘টর্চার সেলে’ নির্মম নির্যাতনে ত্বকীকে হত্যা করা হয়৷
জামশেদকে গ্রেপ্তারের প্রায় পৌনে ১০টা পর তাকে আদালতে তোলা হয়। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশীদ বলেন, “জামশেদকে আদালতে তুলে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে ব়্যাব। বিপরীতে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন৷
“শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷”
ত্বকী হত্যা: বিচার শুরুর অপেক্ষায় কাটল ১১ বছর
ত্বকী হত্যা: এবার আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিল্পী রফিউর রাব্বির বড় ছেলে ত্বকী ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়।
এর দুইদিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল (কুমুদিনী খাল) থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।
হত্যার কারণ হিসেবে র্যাব জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ওই সময় আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান শামীম ওসমান।
এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রফিউর রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। স্থানীয় ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন রফিউর রাব্বি। এসব কারণেই রাব্বির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালে ত্বকী হত্যার বর্ষপূর্তির একদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, ত্বকীকে হত্যার পর যে গাড়িতে করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটির চালক ছিলেন জামশেদ। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনও সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়৷
ত্বকী হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বাবু বলেন, “এই হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুলতান শওকত ভ্রমর গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দিতে পরিষ্কারভাবে তিনি বলেছেন,আজমেরীর গাড়িচালক জামশেদ ত্বকীকে নির্যাতনের সময় উইনার ফ্যাশনের টর্চার সেলে উপস্থিত ছিল এবং ত্বকীর লাশ গাড়িতে তোলার সময় সহযোগিতা করেছেন।
“যেই গাড়িতে করে ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় সেটিও চালিয়েছিলেন এই জামশেদ। এই মামলার তদন্তের জন্য জামশেদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ত্বকী হত্যার ঘটনায় এর আগে রোববার ও সোমবার সাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও কাজল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তাদের র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে গ্রেপ্তার শাফায়েত হোসেন শিপন ও মামুন মিয়া ত্বকী হত্যায় জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
শিপনের স্ত্রী ফারহানা আহমেদ রিংকির দাবি, তার স্বামী আজমেরী ওসমানের বন্ধু কিন্তু তিনি এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
এর আগে ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সুলতান শওকত ভ্রমর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন, তাদের মধ্যে শাফায়েত হোসেন শিপনের নামও ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে মামুনের স্ত্রী রাফিয়া সুলতানা দাবি করেন, “ভ্রমর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যে মামুনের নাম বলেছিল, তার স্বামী ওই মামুন ন। কেউ ভুল তথ্য দেওয়ায় র্যাব তার স্বামীকে অ্যারেস্ট করেছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ওসমান পরিবারের কারও সঙ্গে তার স্বামী মামুনের কোনো সখ্যতা ছিল কি-না সে বিষয়টি জানেন না বলেও জানান ফারহানা।
এই বিষয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, “ত্বকী হত্যা মামলার আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি ও পূর্ববর্তী তদন্তে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরেই আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
“আমরা কাউকেই আসামি বলছি না, তাদের কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত আছেন বলে পাওয়া যাবে, তদন্ত শেষে কেবল তাদের নামই চার্জশিটে উল্লেখ করা হবে।”