‘অবন্তিকার আত্মহত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’, জাবিতে বিক্ষোভ

অবন্তিকা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 12:28 PM
Updated : 17 March 2024, 12:28 PM

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। 

রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

মানববন্ধনে বক্তারা অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনাকে ‘একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে ঘটনার পেছনে থাকা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।  

ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশ) সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, “অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড৷ তাকে দীর্ঘদিন ধরে সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরকে দিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে৷ দেশে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও নারীরা এখনও নিরাপদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও যেভাবে নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক৷” 

বিশ্ববিদ্যালগুলোর অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইমন বলেন, “আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি জগন্নাথের অবন্তিকার জন্য এবং আরও নাম না জানা অনেক অবন্তিকার জন্য যাদের ঘটনা এখনও সামনে আসেনি৷ অবন্তিকার নিপীড়নের পর যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে এর পেছনে দায়ী একটি কাঠামোগত অব্যবস্থাপনা। এই কাঠামোতে এমন শক্তিশালী বলয় কাজ করে যাদের ছত্রছায়ায় নিপীড়ক তৈরি হয়। 

“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নিপীড়নের কারণে একজন শিক্ষককে (মাহমুদুর রহমান জনি) বরখাস্ত করা হয়েছে, সেই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়মুক্তি পত্র লেখানোর অভিযোগ রয়েছে প্রক্টরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে আরেকজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধেও।” 

ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বলেন, “তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টরের কাজ কি নিপীড়ন করা আর নিপীড়ক তৈরি করা? সব জায়গায় প্রক্টর কিংবা সহকারী প্রক্টররাই কেন নিপীড়নে সহায়তা করে? এই ক্ষমতাকে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে; প্রশ্ন না করলে এরকম দিনের পর দিন ক্যাম্পাসগুলো নিপীড়ন তৈরির কারখানা হয়ে যাবে।”

এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশের) সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি মুক্তারুল ইসলাম অর্ক। 

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে অবন্তিকা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ ভবনে তাদের বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। 

আত্মহত্যার আগে নিজের ফেইসবুক পেইজে দীর্ঘ একটি লেখা পোস্ট করেন অবন্তিকা। সেখানে আত্মহত্যার জন্য দায়ী করে যান তার সহপাঠী আম্মান এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে। 

তার অভিযোগ, আম্মান তাকে অনলাইন ও অফলাইনে ‘হুমকির ওপর’ রাখতেন এবং সহকারী প্রক্টরকে এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনিও ‘হুমকি ধমকি’ দিয়েছেন। 

নিজেকে ‘লড়াকু’ মেয়ে বর্ণনা করে এই তরুণী ফেইসবুকে লেখেন, “আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।”

‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়’, এটাও লিখেছেন তিনি। তাও কেন সে পথে গেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, “আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম।”

এ ঘটনায় শুক্রবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার সহপাঠী ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকালে রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন দ্বীন।

রাতে আম্মান ও দ্বীনকে আসামি করে কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় মামলা করেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। সেখানে দুইজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। পরে রাতেই আম্মান ও দ্বীনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।  

আরও পড়ুন: 

অবন্তিকার আত্মহত্যা: সভায় বসেছে তদন্ত কমিটি

অবন্তিকার মৃত্যু: সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও শিক্ষক দ্বীন ইসলাম আটক

অবন্তিকার মৃত্যু: সহপাঠী, শিক্ষককে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

চিরনিদ্রায় বাবাকে পাশে পেলেন অবন্তিকা 

কার কাছে বিচার দেব, অবন্তিকার মায়ের বিলাপ 

অবন্তিকার পরিবার মামলা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ: জবি 

শিক্ষক-সহপাঠীকে ‘দায়ী করে’ জগন্নাথ ছাত্রীর আত্মহত্যা 

অবন্তিকার সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা