ফরিদপুরে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত চাষি

“আগে বিঘা প্রতি ব্যয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়।”

শেখ মফিজুর রহমান শিপনফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2022, 03:12 PM
Updated : 2 Nov 2022, 03:12 PM

শীত মৌসুমে বাজারের চাহিদা পূরণে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ চাষে দিনরাত ক্ষেতে কাজ করছেন ফরিদপুরের চাষিরা। তারা বলছেন, শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশকসহ সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ।

তবে বাড়তি খরচের পরও ভালো ফলন আর আমদানি বেশি না হলে লাভ করতে পারবেন বলে আশা চাষিদের।

এ মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ আবাদ হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে জেলার সদরের অম্বিকাপুর, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, চাষিরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছেন, যারা আগর (আগে ভাগে) আবাদ করেছিলেন তারা চারা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। কেউবা চারায় কীটনাশক দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

চরমাধবদিয়ার আবজাল মণ্ডলের ডাঙ্গীর এলাকার চাষি তুহিন মণ্ডল বলেন, “আগে বিঘাপ্রতি এই পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়।

“বাজারের বিদেশি পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি একরে যে পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারবো সেটা বিক্রয় করতে পারবো লক্ষাধিক টাকায়।”

অম্বিকাপুরের মাঠে কাজ করা চাষি মো. রাজর হোসেন বললেন, “আগর মুড়িকাটা পেঁয়াজের লাইট (ছোট পেঁয়াজ) রোপণ করেছিলাম, ভাল হয়েছে তবে ঘাসও হয়েছে অনেক।”

তিনি আরও বলেন, “এখন পৈরেতের (শ্রমিকের) দর অনেক বেশি। এ বছর সব কিছুর দর বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষেত-খামার করতে ব্যয়ও বেশি হচ্ছে।”

এই মাঠের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজ করছিলেন কৃষক ফরহাদ শেখ। তিনি বলেন, “গত বছর এক বিঘায় যে কীটনাশক দিয়েছিলাম, এবার সেই পরিমাণ দিতে গেলে খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। এ পেঁয়াজে বাজারে ভাল দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”

জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আশুতোষ মালো বলেন, “বাজারের সার, কীটনাশক, লাইট পেঁয়াজের (বীজ) দর বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেড়েছে। তাই আমাদের দাবি, সরকার বিদেশি পেঁয়াজ কম আমদানি করলে চাষিদের পুঁজি উঠবে ঠিকঠাক মতো।”

তিনি আরও বলেন, “আবহাওয়া ভাল থাকলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হবে, তবে বিদেশি পেঁয়াজের আমদানি কমাতে হবে, তবেই আমরা লাভবান হবো।”

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও অল্প সময়ে এই ফসল ঘরে তোলা যায়।”

বছরের এই সময়ে (শীত মৌসুমে) সারাদেশেই পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় মুড়িকাটার চাহিদা থাকে বেশ। এজন্য ভাল দরও পান চাষিরা। তাই চাষিরা বর্ষা শেষের পরপরই মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদ ‍শুরু করেন।”

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, “চলতি মৌসুমে চাষিরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে, এ পেঁয়াজ বাজারের চাহিদা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে চার হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে এ পেঁয়াজের আবাদ হবে আশা করা যাচ্ছে।” 

তিনি বলেন, এই পেঁয়াজ হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ টন উৎপাদন হয়। আর শীত মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি থাকে। তখন চাষিদের এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে।”