মেয়র আরিফের ঢাকা সফর, সিলেটে গুঞ্জন

গত ১০ দিনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেশ পরিবর্তন হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিমত।

বাপ্পা মৈত্র সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 11:25 AM
Updated : 13 May 2023, 11:25 AM

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সরাসরি কখনই বলেননি তিনি নির্বাচন করবেন; তবু তার ‘ইশারা-ইঙ্গিতে’ তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ধারণা হয়েছিল, টানা দুইবারের মেয়র হয়তো ‘বিনা যুদ্ধে’ মাঠ ছেড়ে দেবেন না।

মানুষের এই ধারণার পেছনে কাজ করেছিল মেয়র আরিফের দুটি বক্তব্য। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে দেশে ফিরে বলেছিলেন, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূল্যায়ন তিনি করবেন।

সবশেষ মে দিবসে আরেকটু এগিয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।”

যদিও সেদিন তিনি ‘শেষ কথা’ বলেননি। ২০ মে জনসভা করে ‘শেষ কথা’ বলবেন বলেও জানিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা।

এরপর ২ মে থেকে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে ধরপাকড় শুরু হয় বলে দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ। শেষ ১০ দিনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে নেতাকর্মীদের অভিমত।

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। এ সময় আরিফের নির্বাচন করা না করা নিয়ে সিলেটে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার তিনি সিলেটে ফিরেছেন।

কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলেছেন, আরিফ যদি লন্ডন থেকে দলের সর্বোচ্চ নেতার কাছ থেকে নির্বাচনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েই আসেন; তাহলে এখন ঢাকায় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন?

যদিও এসব ব্যাপারে জানান জন্য শুক্রবার সারাদিন চেষ্টা করেও আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তার মোবাইলে কল করে এবং বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

সিলেট মহানগর বিএনপির এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় গিয়েছিলেন। দলের মহাসচিবের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা তার।

“এর আগে বুধবার রাতে মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে বৈঠক করেছেন। নিবার্চনে অংশ না নিতে নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র থেকেও নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।”

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকাতে যাওয়ায় সিলেটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে; মেয়র কি নির্বাচন করবেন; নাকি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন?

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ৩৫ বছরের সম্পর্ক তার রাজনৈতিক সহকর্মী সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরুর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ধারণা, মেয়র আরিফ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিবার্চন করবেন না। কারণ তিনি বিএনপির একজন পরিপক্ক রাজনীতিবিদ। তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। তাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

“আর যদি দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নিবার্চন করেন তাহলে তিনি একা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ তৈরি করেছে। অনেক নেতাই চাচ্ছেন, বিএনপি এ নিয়ে আলাদা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকুক। এই অবস্থায় আরিফ নির্বাচনে গেলে স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীদের কাছে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

আবার আরেকটি অংশ মনে করেন, সিলেটের রাজনীতিতে আরিফুলের ভিত্তি অনেক শক্ত। তিনি আওয়ামী লীগের সময়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মত প্রার্থীকে হারিয়ে দুবার মেয়র হয়েছেন। বিএনপির এভাবে মাঠ ছেড়ে দেওয়া উচিৎ হবে না।

বিএনপি সিলেট মহানগর কমিটির কমিটির তিন নেতা বুধবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে সভার সময়ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে।

এরপর নেতারা বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ২৫ নেতার নামের একটি তালিকাও কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছেন। যেন নির্বাচন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এই অবস্থায় আরিফ নির্বাচনে গেলে দলে থেকে বহিষ্কার হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। যদি সেরকম হয়, তাহলে নির্বাচন তার জন্য কতোটা লাভজনক হবে সেটিও ভাবতে হচ্ছে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। পাশাপাশি তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে মতামত জানতে চাচ্ছেন।

আরিফুলের নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দল বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছে না। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মানুষ, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও তিনি। ফলে তিনি নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তই নেবেন।”

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন।

এর আগে ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

আরও পড়ুন:

Also Read: সিলেটে ভোট করার ইঙ্গিত বিএনপির আরিফের

Also Read: ভোটে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে ৩ সপ্তাহ সময় চাইলেন আরিফ

Also Read: মেয়র আরিফকে নিয়ে শোভাযাত্রা; বললেন, ‘মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে মূল্যায়ন করব’

Also Read: লন্ডন থেকে ‘সিগন্যাল’ নিয়ে ফিরছেন মেয়র আরিফ

Also Read: নির্বাচনের আগে মেয়র আরিফ লন্ডনে, প্রার্থিতা নিয়ে জল্পনা

Also Read: ‘বাইরের লোক’ আনোয়ারুজ্জামান সিলেট সিটি নির্বাচনে কতটা সফল হবেন