নির্বাচনের আগে মেয়র আরিফ লন্ডনে, প্রার্থিতা নিয়ে জল্পনা

একাধিক নেতার দাবি, আরিফ তারেক রহমানের সঙ্গে নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা করতে গেছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার ঘোষণার মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

দলটির একাধিক নেতার দাবি, আরিফ লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা করতেই গেছেন। 

এ নিয়ে সিলেটজুড়ে শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, ভোটারদের মধ্যে নানা আলোচনা ও নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

যদিও বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন, দেশে ফিরে তিনি তার সিদ্ধান্ত সাংবাদমাধ্যমকে জানাবেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী টানা দুইবারের মেয়র। এর আগে তিনি সিলেট পৌরসভার জনপ্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিলেট নগরবাসীর মধ্যে আলোচনা চলছে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থীতা নিয়ে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী না থাকলেও ‘ঘোমটা পরে’ সবখানেই তাদের প্রার্থী ছিল।

“এই ঘোমটা পরা প্রার্থী কিন্তু সিটি নির্বাচনেও থাকবে। সিলেটের আরিফ বর্তমান মেয়র অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই অন্যান্য সিটিতেও ঘোমটা পরা তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা বিএনপির রাজনীতির আরেক ভণ্ডামি। এটা ভণ্ডামি, তারা করছে।”

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু সাংবাদমাধ্যমে বলেন, “বিএনপির হাইকমান্ড সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে। সময়ই বলে দেবে দলীয় সিদ্ধান্ত কী আসবে।

“যেহেতু বর্তমান সিটি মেয়র বিএনপি পরিবারের একজন, সেহেতু দল এটি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। আর এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, হয়তো-বা দল সেক্ষেত্রে নমনীয় থাকতে পারে কিংবা মেয়র আরিফুলের প্রতিও নমনীয় থাকতে পারে।” 

সিলেট বিএনপির একজন নেতা জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সোমবার তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। লন্ডনের অভিজাত কিংস্টন এলাকায় তাদের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি আরও জানান, দলীয় পদে থেকে নির্বাচনে গেলে আরিফ দল থেকে বহিষ্কৃত হবেন। তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না। তবে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও দলীয় পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আরিফুল হক চৌধুরীকে বহিষ্কার হতে হবে না।  

চলতি সপ্তাহেই আরিফের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি এলেই হয়তো এ ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা পাওয়া যাবে বলে জানান বিএনপি এই নেতা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, “সিলেট নগরের চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ করতে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তিনি দুই মেয়াদে মেয়র হয়েছেন; এবার তৃতীয় মেয়াদে হওয়ার জন্য নির্বাচন করতেই পারেন।”  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন; তাই নির্বাচন করাই সঠিক হবে। আমার মনে হয় বর্তমান মেয়র অরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন করবেন।” 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিলেন যারা

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে মঙ্গলবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এমএ হাসান জেবুল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু।

বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।

সিসিক নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ২৩ মে, প্রত্যাহার ১ জুন এবং ভোটগ্রহণ ২১ জুন নির্ধারণ করেছে কমিশন।

বর্তমান সিটির আয়তন বেড়ে ২৭টি থেকে ৪২টি ওয়ার্ডে উন্নীত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট নগরী গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেন, তাহলে সবার সহযোগিতায় নৌকার বিজয় উপহার দিতে পারব। যদি মনোনয়ন নাও পাই, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করে যাব।”

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার আওয়ামী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। আমরা যারা মাঠে রাজনীতি করছি প্রধানমন্ত্রী তাদের সততা, কর্মকাণ্ড ও ত্যাগ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।”