আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বহিরাগত আখ্যায়িত করে তাকে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
Published : 01 May 2023, 06:37 PM
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির মনোনয়নে টানা দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।”
মে দিবসে সোমবার সিলেটে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সহযোগী সংগঠনের শোভাযাত্রার আগে রেজিস্টারি মাঠে এক সমাবেশে এ কথা বলেন আরিফ।
কেন সিলেট সিটি করপোরেশনে অংশ নেবেন, সে বিষয়ে আগামী ২০ মে রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ করে কারণ জানাবেন বলে জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না। সিলেটসহ আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে বরিশাল ও গাজীপুরে বিএনপিতে যুক্তরা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। সিলেটে আরিফুল কী করবেন, সে দিকে ছিল অনেকের কৌতূহল।
রোজার মধ্যে যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন আরিফ। দেশে ফিরে বলেছিলেন, ঈদের পর তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এরপর গত শুক্রবার বলেছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত জনসভা করে কিছু দিনের মধ্যে সবাইকে জানাবেন।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালেই ১১ এপ্রিল তিনি বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে আমার নেতার (তারেক রহমান) মিটিং হয়েছে। তিনি আমাকে একটা সিগন্যালও দিয়েছেন। সেটা রেড কিংবা সবুজ- সেটা সময়ই বলে দেবে।”
এরপর ১৬ এপ্রিল দেশে ফিরে ভোট করার বিষয়ে সরাসরি অবস্থান না জানালেও বলেছিলেন, তিনি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ‘মূল্যায়ন’ করবেন।
তবে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বলছেন, ভোটে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে ‘সচেতন ভোটার, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ মুরব্বিদের’ সঙ্গে তিনি আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করছেন আরিফ।
সিলেট সিটি মেয়রের ভাষ্য, “ইভিএম দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে অনির্বাচিত করার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসলে সরকারের প্রহসন। ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও- সে ভোট অন্য প্রার্থীর হয়ে যাবে।”
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পুরোপুরিই হবে ইভিএমে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিলেটে দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর পর আরিফ ২০১৩ সালে প্রথমবার মেয়র পদে নির্বাচন করে হারিয়ে দেন তখনকার মেয়র আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। ২০১৮ সালেও তিনি কামরানকে হারিয়ে মেয়র হন তিনি।
‘বাইরের’ কাউকে ছাড় দেবেন না আরিফ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সিলেটে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনীত করেছে। তাকে ‘বাইরের’ ব্যক্তি আখ্যায়িত করে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র আরিফ।
সোমবারের জনসভায় তিনি বলেন, “বাইর থেকে এসে কেউ নেতৃত্ব দিয়ে আমাদেরকে তাদের দাস বানাতে পারবেন না। আমরা কারও দাস বনতে চাই না; আমাদেরকে রক্তচক্ষু দিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। মানুষ ফুঁসে উঠেছে, আমাদের মা-বোনরা পর্যন্ত প্রতিবাদের জন্য নেমে আসবেন।”
মেয়র প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সিলেট নগর আওয়ামী লীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত। আনোয়ার মনোনয়ন পাওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় একাধিক নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সেই আগুনে এখন ঘি ঢালার চেষ্টা করছেন বিএনপির নেতা আরিফ।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, সকল রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে যারা সিলেটের মাটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তাদেরকে বাদ দিয়ে হায়ার করে বাইর থেকে এসে বিভিন্ন এলাকার নেতাদেরকে দিয়ে আমাদেরকে নেতৃত্ব দেবেন, আমরা কি সবাই ওই দাস প্রথার দস্তগত দিয়েছি?
“সিলেটকে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে- যেন সিলেটে কোনো মানুষ নেই; আমাদেরকে ছবক দেওয়ান জন্য বাইর থেকে এনে নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছে- আমরা পরিহার করি। সিলেটের মানুষ নেতৃত্ব দিতে পারবে- এই মাটির সন্তানরাই যথেষ্ট। আধ্যাত্মিক নগরে এমন অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবেন।”