স্থাপনা, সড়ক ও বাজার রক্ষায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।
Published : 14 Dec 2024, 01:14 PM
মধুমতি নদীর বিলরুট চ্যানেলের ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ মাস দুয়েক আগে শুরু হয়েছে। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার প্রতিবন্ধকতায় থমকে গেছে কাজ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে ফের ভাঙনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অবৈধ স্থাপনাগুলি সরিয়ে নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার নোটিশ দিলেও অনেকেই এখনো সেগুলো সরিয়ে নেননি। তারা বলছেন, স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পর পুনর্বাসন করা না হলে তারা জীবীকা নিয়ে বিপাকে পড়বেন।
তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দ্রুত অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম রেফাত জামিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে মধুমতি নদীর বিলরুট চ্যানেলে ২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দেয়।
এতে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক, মঞ্জুরুল হক খান কলেজ, মসজিদ, উলপুর বাজার, বাজারের বেশ কিছু বাণিজ্যিক ভবন হুমকির মুখে পড়ে।
সরকার এসব স্থাপনা সড়ক ও বাজার রক্ষায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করে। দরপত্র আহ্বান শেষে ঠিকাদারকে কার্যাদেশও প্রদান করা হয়।
দুই মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে ডাম্পিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন অবৈধ স্থাপনার কারণে সিসি ব্লক স্থাপনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম রেফাত জামিল বলেন, নদী ভাঙন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এ কারণে সিসি ব্লক স্থাপন করা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ না হলে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কসহ অন্যান্য স্থাপনা বিলীনের আশঙ্কা আছে।
“তাই আমরা সেখান থেকে ৫০টি অবৈধ স্থাপনাকে সরিয়ে নিতে নোটিশ করেছি। কেউ, কেউ অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্থাপনা এখনো রয়ে গেছে।
“এগুলো অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব’ বলেন এই প্রকৌশলী।
স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেনজীর কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম নবী বলেন, “পাকা ভবন নির্মাণ করে নদীর পাড় অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। এ কারণে সেখানে সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ করা যাচ্ছে না। তাই অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যত দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে, তত দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
এ বিষয়ে অবৈধ স্থাপনায় ওষুধ ব্যবসা পরিচালনাকারী সুকুমার বিশ্বাস বলেন, “আমাদের দুই-তিন বার মৌখিকভাবে দোকান সরিয়ে নিতে বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে নোটিশও দিয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর পাকা অংশ ভেঙে দিয়েছি। পাকা অংশের সামনে অস্থায়ী টিনশেড ঘরে ব্যবসা করছি।
তিনি বলেন, “৮ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। তাই আমাদের পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি। পুনর্বাসন করা হলে ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারব।”
অবৈধ স্থাপনায় মুদি দোকান পরিচালনাকারী তনু বলেন, “নোটিশ পেয়েছি। কিন্তু কোথায় যাব? যাওয়ার জায়গা নেই। আমাদের জায়গার ব্যবস্থা করে দিলে দোকান সরিয়ে নেব। নইলে তো না খেয়ে মরতে হবে। ”
আরেক স্থাপনার মালিক মো. মিন্টু শেখ বলেন, “আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যতটুকু ছেড়ে দিতে বলেছে, আমি ততটুকু ছেড়ে দিচ্ছি। উচ্ছেদের আগেই সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি “
উলপুর বাজারে ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য মনির হোসেন বলেন, “সরকার এখানে নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছে। বাজার, সড়কসহ স্থাপনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় আমরা এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”