বিক্ষোভের মুখে আপিল বিভাগের সব বিচারপতিসহ প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ এবং আরও ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার ঘটনা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
Published : 31 Dec 2024, 09:25 PM
এ বছর নানা ঘটনায আলোচনার মধ্যে ছিল দেশের আদালত অঙ্গন। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার, কারাবরণ, জামিন, মামলা থেকে খালাস, অব্যাহতি আদালত অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে। উচ্চ আদালতের কয়েকটি মামলায় আলোচিত রায় এসেছে বিদায়ী বছরে।
এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন। খালাসের সারিতে তাদের সঙ্গে রয়েছেন দলের আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
আলোচিত ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাসের রায়, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও খালাসের রায় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে অব্যাহতির রায় ব্যাপক আলোচিত ছিল।
সুপ্রিম কোর্টকে কাঁপিয়ে দিয়েছে যে ঘটনা, তা হলো বিক্ষোভের মুখে আপিল বিভাগের সব বিচারপতিসহ প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ। এরপর আরেক বিক্ষোভের মধ্যে আরও ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার ঘটনা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
এর মধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি এসে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেছেন, যা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থি কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগও উত্তাপ ছড়িয়েছে শীর্ষ এই আইনাঙ্গনে।
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় দণ্ডিত সব আসামি খালাস
দুই দশক আগে, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। ওই সরকারের সময়ে ওই ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা হয়।
পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলাটির তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে। ২০০৮ সালে এ মামলায় প্রথমে ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আওয়ামী লীগ আমলে এ মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) অধিকতর তদন্ত হয় এবং তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেয়। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাবেক ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৪৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
বিচারিক আদালতের রায়ের আগে অন্য একটি মামলায় গ্রেনেড হামলার মামলার আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৮ সালে মামলার নথি হাই কোর্টে যায়। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করেন।
ওই আপিলের শুনানি শেষে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর হাই কোর্ট সব আসামিকে খালাস দেয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাই কোর্ট অভিমত দেয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত। তাই যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রায়ের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা মৃত্যুদণ্ডের ৬ আসামি খালাস
বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় সাবেক বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সাতজনকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড করা হয়েছে।
জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাকি ছয় আসামির সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
গত ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।
খালাস পেয়েছেন লুৎফুজ্জামান বাবার, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক, জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে), সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমীন, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহীম।
এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিম মারা যাওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে মামলা অকার্যকর হয়ে গেছে।
১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, ‘চোরাকারবারি’ হাফিজুর রহমান, ‘চোরাকারবারি’ দীন মোহাম্মদ এবং চোরাকারবারিদের সহযোগী হাজি আবদুস সোবহানকে।
১৪ আসামির মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিম মারা যাওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে মামলা অকার্যকর হয়ে গেছে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে বন্দরনগরীর কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা করা হয়।
পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় দেয়।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সেই রায়ে।
অস্ত্র আইনে করা আরেক মামলায় আসামিদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবর খালাস, সাজা কমল পরেশের
জবির খাদিজাতুল কুবরাকে অব্যাহতি
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি খাদিজাতুল কুবরাকে সব মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। পাশাপাশি আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
এ আগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি কলাবাগান থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে অব্যাহতির আদেশ দেন আদালত।
দুই মামলাতেই অব্যাহতি পেলেন জবি শিক্ষার্থী খাদিজা
এক মামলায় অব্যাহতি পেলেন জবি শিক্ষার্থী খাদিজা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা একটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন। সেখানে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ করার অভিযোগে ২০২০ সালে খাদিজা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয় কলাবাগান ও নিউ মার্কেট থানায়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে করা ওই দুই মামলার এজাহারের অভিযোগ এবং বর্ণনা প্রায় একই রকম। মামলার দুই বছর পর ২০২২ সালের ২৭ অগাস্ট খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। তখন থেকে কারাগারে ছিলেন এই শিক্ষার্থী।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর অধস্তন আদালতে খাদিজার জামিন আবেদন কয়েক দফায় নাকচ হয়েছে। গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট তাকে জামিন দিলেও তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ জুলাই বিষয়টি আপিল বিভাগে ওঠে। পরে আদালত বিষয়টি চার মাসের জন্য মুলতবি করে।
গত ১৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় হাই কোর্টের জামিন আদেশই বহাল থাকে।
এরপর ২০ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা
গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছয় বছর আগে জজ আদালত এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে হাই কোর্ট খালাসের এ রায় দেয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।
আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। পরের বছর ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট। কিন্তু তখন আর শুনানি হয়নি।
দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান। এর পর থেকে ছয় মাস পরপর সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
কিন্তু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারো দণ্ড (সেনটেন্স) বাতিল করলেও তিনি যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (কনভিকশন), সেই রায় বাতিল হয় না। আর আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
সে কারণে রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করার পরও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস চেয়ে নভেম্বরের শুরুতে হাই কোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জিয়াউর রহমানের নামে খোলা এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের এই মামলায় তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা ছাড়াও আসামি করা হয় তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা
পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে সাত নম্বর কক্ষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলার অপর তিন আসামিরও সাজা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদার সাজা স্থগিত
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিলের শুনানি করে গত ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একইসঙ্গে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এদিকে মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও আবেদন করে হাই কোর্টে।
দুই আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। আর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সরকার পরিবর্তনের পর সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তাকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হল।
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: সাজা স্থগিত করে খালেদাকে আপিলের অনুমতি
তত্ত্বাবধায়কে ফেরার পথ খুলেছে হাই কোর্টের রায়ে
এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, হাই কোর্ট তার কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করায় পুনরায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরার পথ খুলেছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে করা দুই রিট মামলার রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর এ রায় দেয়।
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল।
এর মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।
পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ (ক) অনুচ্ছেদে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছিল।
৭ (খ) সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা ছিল।
সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা ছিল এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, “এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাই কোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।”
আদালত বলেছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের কথা ছিল, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল করা হয়। এ বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বিবেচনায় তা বাতিল ঘোষণা করা হল এবং দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আগামী জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার রায়ে 'তত্ত্বাবধায়ক' ফেরার পথ খুলল
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ
দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগরে সব বিচারপতি গত ১০ অগাস্ট পদত্যাগ করেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ওইদিন আন্দোলনকারীরা আপিল বিভাগের সব বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘোরাও করে।
সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবির মধ্যে ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের অপর পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
ওইদিন সকালে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।
ফুলকোর্ট সভা আহ্বানের পর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ও নানান অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছেন।
পদ ছাড়তে হল প্রধান বিচারপতিকেও
আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির পদত্যাগ
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও
“পরাজিত শক্তির যে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা এরইমধ্যে এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন। আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে।
“অনবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন।”
এর পরপরই প্রধান বিচারপতির ডাকা ফুলকোর্ট সভা স্থগিত করার খবর পাওয়া যায়। এরপর বিচারপতিদের পদত্যাগের খবর আসে।
হাই কোর্টের ১২ জন বিচারককে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাই কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে গত ১৬ অক্টোবর হাই কোর্টের ১২ জন বিচারককে কোনো বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি।
আপাতত বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না ১২ বিচারপতি
বিচারপতি অপসারণে ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে যে রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সাত বছর আগে দিয়েছিল, পর্যালোচনার পর সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ২০ অক্টোবর কিছু নির্দেশনাসহ এ বিষয়ে করা নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।
এখন কোনো বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে বা পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বিচারপতি অপসারণ হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে: রিভিউ
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল