ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ফিরল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল

বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল করেছে সর্বোচ্চ আদালত, যার ফলে সামরিক সরকারের করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান আবার ফিরেছে সংবিধানে।

মেহেদী হাসান পিয়াসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2017, 04:35 PM
Updated : 1 August 2017, 04:35 PM

আর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি কার্যকর করতে বিচারকদের জন্য গতবছর দেওয়া আচরণবিধি সংশোধন করে ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এক মাস আগে আপিল বিভাগের দেওয়া আলোচিত এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি মঙ্গলবার প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।  

৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করা হল। ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেহেতু ওই সংশোধনীর আগে যে ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হল। 

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত, তার কারণ এটা নয় যে তা অভ্রান্ত; সেসব সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত, কারণ তা চূড়ান্ত হয়েছে সংবিধানের ভিত্তিতে।”   

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত।

সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবীর এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দিলে হাই কোর্টের রায়ই বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আলাদাভাবে রায় লিখলেও সবাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন।

আর বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা প্রধান বিচারপতির লেখা রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত পোষণ করেছেন। 

চূড়ান্ত রায়

“একজন বাদে বেঞ্চের সকল সদস্য আলাদা রায়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। সর্বসম্মতভাবে আমরা আপিল খারিজ করে দিচ্ছি এবং হাই কোর্টের রায়ের কিছু মন্তব্য এক্সপাঞ্জ করছি।

“সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ধারা পুনঃস্থাপিত হয়েছে এবং মূল রায়ে বিচারকদের জন্য আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছে।”  

রায় প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “এই রায়ের ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃস্থাপন হয়ে গেছে। অর্থাৎ, এখন থেকে কোনো বিচারককে অপসারণের প্রয়োজন হলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হবে।”

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “মার্শাল ল আমলে সংবিধানের ৯৬ ধারা সংশোধন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে বিধান অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছিল, উনারা (আপিল বিভাগ) তা রিস্টোর করেছেন। কিন্তু আমার বক্তব্য হল, সংবিধানের যে কোনো ধারা সংশোধন করা বা বাদ দেওয়া- সবটাই সংসদের ব্যাপার। কোর্ট যদি নিজেই রিস্টোর (পুনঃস্থাপন) করে দেয়, তাহলে সংসদের থাকার তো কোনো দরকার হয় না।”

রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না- সেই সিদ্ধান্ত সরকার দেবে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে সরকার যে পরামর্শ বা আদেশ দেবে, সে অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন।

সরকার এখন কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না পড়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল

ষোড়শ সংশোধনীর আগে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল হওয়ায় বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তির জন্য ১৯৭৭ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময় করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে এসেছে।

ওই অনুচ্ছেদের পুরনো ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনও সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।

কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।

৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন।

৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মত ক্ষমতা ধারণ করবে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায় প্রকাশের পর নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান পুনঃস্থাপন করার বিষয়ে নিজের মতভিন্নতার কথা তুলে ধরেন।

“আমার কথা হল, সংবিধানের যে কোনো সংশোধনকে তারা (সুপ্রিম কোর্ট) অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্ত সংবিধানের কোনো ধারা পুনঃস্থাপন বা রিস্টোর করা- আমার বিবেচনায় এটা সংসদের কাজ।”

তাহলে আদালতের রায় অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর করতে এখন নতুন করে আইন করতে হবে কি না, আইন না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে কি না- তা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এটা এ মূর্হতে বলা কঠিন। এখন আমি এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।”

এ রায় নিয়ে আগের মতই নিজের হতাশার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংযুক্ত হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে, যখন আমাদের সংবিধান প্রণেতারা বসে এটা প্রণয়ন করেছিলেন। আর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কনসেপ্টটা হল সেনা শাসকদের কনসেপ্ট, পাকিস্তানের কনসেপ্ট, জিয়াউর রহমানের কনসেপ্ট। কাজেই এটার পুনঃস্থাপনে আমি ব্যথিত।”

‘অনুচ্ছেদ ১১৬ সাংঘর্ষিক’

নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের ক্ষমতা সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে; ওই অনুচ্ছেদ সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে এই রায়ের পর্যবেক্ষণে মত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। 

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে।

সংবিধানে প্রদত্ত এই ক্ষমতায় সরকারের আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির পক্ষে এসব কাজ করে থাকে।

আবার সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে অধঃস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হাই কোর্টের হাতে দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি তার লেখা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলাবিধানের ক্ষমতা যদি না থাকে, তাহলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর হাই কোর্টের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব তা বোধগম্য নয়।

বাহাত্তরের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের ধারায় অধস্তন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকলেও পরে চতুর্থ সংশোধনীতে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির হাতে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনলেও ১১৬ অনুচ্ছেদে বাহাত্তরের বিধান আর ফেরেনি।

ওই ক্ষমতা এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে না থাকায় ‘দ্বৈত শাসন’  সৃষ্টি হচ্ছে মন্তব্য করে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করে ১৯৭২ এর সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ ফেরানোর কথা বলে আসছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেছেন, ওই অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের হাত থেকে অধস্তন আদালতের শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রধান বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণে সমর্থন দিয়েছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

তবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন; আর বাকি তিনজন ওই অনুচ্ছেদ নিয়ে কিছু বলেননি। রায়ের আদেশ অংশে ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে কিছু বলা হয়নি।  

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ের ভেতরে যাই বলা থাকুক, রায়ের সমাপনীতে কী বলা আছে- সেটা দেখতে হবে। অর্ডার অব দ্যা কোর্ট যেটা- সেখানে কিন্তু ১১৬ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।”

মাহবুবে আলম বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে বেঞ্চের একজন বিচারকের মতামত রায়ে এসেছে। কিন্তু ‘অর্ডার অব দ্যা কোর্ট’ অংশে যেহেতু তা রাখা হয়নি, সুতরাং তাকে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত বলা যাবে না।

“তাহলে ১১৬ বাতিল হয়েছে বলেও ধরা যায় না। ১১৬ ধারা যদি বাতিল করতে হত, তাহলে সবাইকে সেখানে সই করতে হত। তা হয়নি।”

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।

পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলেও তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সেই পরিবর্তন আসে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে। তাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ।

ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। শুনানি শেষে ২০১৬ বছরের ৫ মে হাই কোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

হাই কোর্টের রায়

“বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন।

“এটা সংবিধানের দুটি মূল কাঠামো ৯৪(৪)ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭(বি) অনুচ্ছেদকেও আঘাত করে।

“সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে রুল যথাযথ (অ্যবসলিউট) ঘোষণা করা হল। ষোড়শ সংশোধনী আইন ২০১৪ কালারেবল, এটি বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হল।”

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে চলতি বছর ৮ মে আপিল বিভাগের ‘ফুলবেঞ্চে’ শুনানি শুরু হয়। সব মিলিয়ে ১১ দিন রাষ্ট্র ‍ও রিট আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা।

গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতবন্ধু হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ নয়জনই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন।

কামাল হোসেনের সঙ্গে একই মত পোষণকারীরা হলেন টি এইচ খান, এ এফ এম হাসান আরিফ, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে অবস্থান জানান শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি।

আদালত মোট ১২ জন আইনজীবীকে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিলেও তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি।

তাদের বাইরে ‘ইন্টারভেনার’ হিসেবে সংবিধানের এই সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু।

সাত বিচারকের আপিল বিভাগ ৩ জুলাই যে রায় দেয়, তাতে হাই কোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে দেওয়া হয়।