ছয় বছর আগে এ মামলার রায়ে ৫ বছরের সাজা হয়েছিল খালেদা জিয়ার, পরে হাই কোর্ট তা বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
Published : 11 Nov 2024, 10:27 AM
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিলের শুনানি করে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
শুনানিতে খালেদার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামালসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।
পরে জয়নাল আবেদীন বলেন, “লিভ টু আপিলের দুটি আবেদনের শুনানি হয়েছিল গতকাল। আমাদের গ্রাউন্ড শুনে আজ নিয়মিত আপিল শুনানির আবেদন মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা স্থগিত থাকবে আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একইসঙ্গে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এদিকে মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও আবেদন করে হাই কোর্টে।
দুই আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। আর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সরকার পরিবর্তনের পর সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তাকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল জজ আদালত। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ওই মামলায় তাকে সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়।পরের বছর ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট।
দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান। এর পর থেকে ছয় মাস পরপর সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
তারপরও সম্প্রতি এ দুই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিলের আবেদনের ওপর শুনানির আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ৩ নভেম্বর হাই কোর্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির অনুমতি দেয়। আর সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার সাজা স্থগিত করল আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করার পরও আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করলেও খালেদা জিয়া চান আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসবেন। তাই আমরা শুনানির জন্য আবেদন করেছি।”
খালেদার দণ্ড মওকুফের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং-১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হল।”
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দণ্ডের ‘মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম’ মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড ‘মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস’ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।
কিন্তু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারো দণ্ড (সেনটেন্স) বাতিল করলেও তিনি যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (কনভিকশন), সেই রায় বাতিল হয় না। আর আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
দণ্ড মওকুফ হলেও নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার জন্য আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
পুরনো খবর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: আপিলের অনুমতির আদেশ সোমবার
জিয়া ট্রাস্ট মামলা: নির্দোষ প্রমাণের প্রত্যাশায় খালেদার আপিল শুনানির উদ্যোগ