নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে সেনা সদস্যদের রাখার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের।
Published : 11 Dec 2023, 09:46 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েন চায় নির্বাচন কমিশন।
এবার ভোটের আগে ও পরে মিলিয়ে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সেনা সদস্যদের ১৩ দিন মাঠে রাখার প্রস্তাব কমিশনের।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে নীতিগত এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগের বারের মতো এবারও বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনা সদস্যদের কাজ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা বৈঠক শেষে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে সহায়তা করবে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়।
সচিব বলেন, “প্রাথমিক আলোচনার আলোকে মাননীয় কমিশন অনুরোধ জানিয়েছেন সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে সার্বিক সহায়তার একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য। আজ প্রারম্ভিক আলোচনা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন তাহলে পরবর্তীতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।”
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি-১৩ দিন সেনা মোতায়েনের জন্য ইসির চাহিদা রয়েছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য কাজ করছে ইসি। গতবার ৩৫ হাজারের মতো মোতায়েন ছিল। এবার বেশি প্রয়োজন হলে সেভাবে মোতায়েন হবে। সব প্রস্তুতি রয়েছে।”
নির্বাচনে এবার থাকবে সাড়ে ৭ লাখ নিরাপত্তা সদস্য
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: হাজার কোটি টাকা চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার কথাও বৈঠকে জানিয়েছেন তিনি।
অতীতেও সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন হবে।”
৭ জানুয়ারির এবারের ভোট ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রাথমিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে কমিশন জানিয়েছে। আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোর মত দ্বাদশ এ সংসদ নির্বাচনেও বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা দিতে সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়ে আসছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
তবে সশস্ত্রবাহিনী কবে থেকে মোতায়েন হবে তা জানা গেল সোমবারের বৈঠকে।
এবারের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্যকে মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসি। এরইমধ্যে আনসার সদস্য ৫ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র্যাব এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন, বিজিবি ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভোটে এবারও সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে: ইসি আনিছুর
মঙ্গলবার থেকেই ভোটের মাঠে নামছেন হাকিমরা
সিইসি হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে এদিন বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর বলেন, “এটা পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা। নীতিগিতভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনি কাজে দায়িত্ব দিলে কমিশন যেভাবে চাইবে সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।”
প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, এটা একটা প্রারম্ভিক আলোচনা ছিল। নির্বাচনকালীন সহায়তা ও মোতায়েনসহ কীভাবে কাজ করা হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি এ সভায় নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “কমিশন চাচ্ছেন সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন হোক। মূলত ডেপ্লয়মেনটা হবে-এটা মাননীয় নির্বাচন কমিশন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবেন, রিকমেন্ডেশন দেবেন। তার ভিত্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি সিদ্ধান্ত দেন যে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনে ডেপ্লয় হবে; তাহলে অবশ্যই সেনা মোতায়েন হবে।
“আমি নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি, যেভাবে কমিশন সশস্ত্রবাহিনীর সহায়তা চাইবেন, আমরা সেভাবেই আমরা সর্বাত্মত সহায়তা সহযোগিতা করব।”
কমিশন একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “এ ব্যাপারে আমার সামান্যতম সন্দেহ নেই। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সিরিয়াস একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে। আমরা সশস্ত্র বাহিনী যদি ডেপ্লয় হই, মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি নির্দেশ দেন আমরা অবশ্যই ডেপ্লয় হব।
“নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক অবশ্যই সাহায্য সহায়তা করব একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য।”