পাঁচ আসনে প্রার্থী শূন্য থাকল আওয়ামী লীগ। অন্য কাউকে এখন মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই।
Published : 15 Dec 2023, 10:14 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া পৌনে তিনশ জন নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন, এমন পাঁচ জন প্রার্থীকে আবার নির্বাচন কমিশন অবৈধ ঘোষণা করেছে।
সব মিলিয়ে এখন বৈধ প্রার্থী ২ হাজার ২৬০ জনের মতো। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কত জন ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন, সেটি জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও দুই দিন।
রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন প্রার্থীদের কেউ কেউ ভোট থেকে সরে দাঁড়াবেন, এটি অনুমেয়। আর আওয়ামী লীগ তার শরিকদেরকে যেসব আসনে সমর্থন দেবে, সেসব আসনে তাদের প্রার্থীর তুলে নেওয়ার ‘চাবি’ দলের হাতেই।
টানা ছয় দিন ৫৬০টি আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এ তথ্য মিলেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ায়ের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর এসব আপিলের শুনানি নেয়।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পরদিন সোমবার প্রতীক বরাদ্দ হবে। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা দলের প্রতীক পাবেন আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের পছন্দের অথবা লটারিতে তাদের নামে প্রতীক বরাদ্দ হবে।
এরপর চলবে ভোটের প্রচার। আগামী ৭ জানুয়ারি হবে ভোট।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার অবৈধ ঘোষণা করেছেন, এমন আদেশের বিরুদ্ধে ৫২৫টি এবং প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে ৩৫টি আবেদন জমা পড়েছিল এবার।
এসব আবেদনের মধ্যে ২৮০ জন তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আর বৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ৫টি আপিল আবেদন গৃহীত হয়েছে।
ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতেও শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাছাইয়ে বৈধ ঘোষিত তিন প্রার্থী বাদ আওয়ামী লীগের
নির্বাচন কমিশনে আপিলে দ্বৈত নাগরিকত্ব, হলফনামায় অসত্য তথ্য ও ঋণখেলাপের অভিযোগে প্রার্থিতা হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের তিন জন। এরা হলেন যশোর-৪ আসনের এনামুল হক বাবুল, ময়মনসিংহ-৯ আসনের আব্দুস সালাম ও ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করে দিয়েছিলেন, এমন চারজনের মধ্যে দুই জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আপিলে। এরা হলেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের নাসিরুল ইসলাম খান ও নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ।
বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ ও কক্সবাজার-১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদও প্রার্থিতা ফিরে পাননি। ফলে সব মিলিয়ে পাঁচটি আসনে এখন নৌকার প্রার্থী নেই।
নির্বাচন কমিশন সচিব জানান, কোনো আসনে দলীয় প্রার্থী বাদ পড়লে অন্য কাউকে বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক দেওয়া সুযোগ নেই।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আদেশে বৈধ ঘোষিত বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সেরানিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এর প্রার্থিতাও বাদ পড়ে গেছে আপিলে।
কার কত আপিল
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে যত আপিল হয় তার মধ্যে ৩২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ভোটে আসা ২৯টি দলের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির অনুমোদিত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
বাকি ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫টি আপিল, জাতীয় পার্টি ৩১টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ২৬টি, তৃণমূল বিএনপি ২৩টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ১৮টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৭টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট ১৫টি, জাকের পার্টি ১৪টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ১০টি আপিল করে।
এছাড়া এর বাইরে জাসদ ও ইসলামী ঐক্যজোটের ৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৮ জন, তরীকত ফেডারেশন, গণফোরাম ও গণফ্রন্টের ৫ জন করে; কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৪ চার জন; বিকল্পধারা, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ, তিন জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, সাম্যবাদী দল (এম এল), কৃষক শ্রমিক লীগ ও জাতীয় পার্টি-জেপির একজন করে নেতা আপিল করেন।
বাছাই ও আপিলের হিসাবনিকাশ
>> এবার সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭৪৭ জন এবং বাকিরা ২৯টি দলের।
>> বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেন ৭৩১টি মনোনয়ন, এর মধ্যে স্বতন্ত্র ৪২৩ জন।
>> আপিল আবেদন জমা পড়ে ৫৬০টি। যার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আবেদন ছিল ৩২৪টি।
>> প্রার্থিতা ফিরে পেল পৌনে তিনশ; যাদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র।
>> ৩৫ জন বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিলের মধ্যে ৫ টি আপিল মঞ্জুর হয়; যাতে ৫ জনের প্রার্থিতা বাদ গেছে।
>> সব মিলিয়ে ৫৬০টি আপিল শুনানি করে ২৮৫টি গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। নাকচ হয় ২৭৫টি।
>> ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ৩ হাজার ৬৫। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ৭৮৬টি। নির্বাচন কমিশনে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান ২৪১ জন।
আপিল নিষ্পত্তির হিসাব
মঞ্জুর | নামঞ্জুর | নিষ্পত্তি | |
---|---|---|---|
১০ ডিসেম্বর | ৫৬ | ৩২ | ৮৮ |
১১ ডিসেম্বর | ৫১ | ৪১ | ৯২ |
১২ ডিসেম্বর | ৬৪ | ৩৫ | ৯৯ |
১৩ ডিসেম্বর | ৪৮ | ৫৩ | ১০১ |
১৪ ডিসেম্বর | ৪৪ | ৫২ | ৯৬ |
১৫ ডিসেম্বর | ২২ | ৬২ | ৮৪ |
২৮৫ | ২৭৫ | ৫৬০ | |
প্রার্থিতা প্রত্যাহার রোববার পর্যন্ত
১৭ ডিসেম্বর বিকালের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। এরপরই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। এরপর ব্যালট ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।
তবে এরপরও আদালতের আদেশে কেউ যুক্ত বা বাদ হতে পারে।
কমিশন কর্মকর্তারা জানান, ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন জানাতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
একই আসনে যেসব একাধিক প্রার্থী রয়েছে তাদের মধ্যে চূড়ান্ত মনোনয়ন কে পাচ্ছেন বা কাকে দলীয় প্রতীক দিতে হবে, তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সেদিনের মধ্যে জানাতে হবে। নির্বাচন কমিশনেও এরপর অনুলিপি দিতে হবে।
দলীয় প্রার্থীর পোস্টারে দলীয় প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবে জোটপ্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজের ছবি ও প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরই প্রচারণার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোট পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
দ্বৈত নাগরিকত্ব: সাদিক-শাম্মী-শামীমের প্রার্থিতা বাতিল, টিকে গেলেন আজাদ
প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে যাবেন শাম্মী-সাদিক
শাহজাহান ওমর, জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বৈধই রইল
নির্বাচন: বাছাইয়ে বাতিল ৭৩১ মনোনয়নপত্র
১% ভোটারের স্বাক্ষর তালিকার হেরফেরে বাদ অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী