যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, ইসিতে তারা আপিল করা শুরু করেছেন। প্রথম দিন ৪২ জন আবেদন করেছেন, যাদের ২৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
Published : 05 Dec 2023, 11:53 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়া ৭৩১ জনের মধ্যে ৪২৩ জনই স্বতন্ত্র; নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত সমর্থন তালিকায় গড়মিলের কারণে বাদ পড়েছেন তাদের বেশিরভাগ।
এছাড়া হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ না দেওয়া, লাভজনক পদে অধিষ্টিত থাকা, মামলার তথ্য গোপন করার কারণে বাদ পড়েছেন কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দলীয় প্রার্থী বাদ পড়েছেন তিন শতাধিক; তাদের বেশিরভাগের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণ, বিল ও কর খেলাপির কারণে।
গত ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৯টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে দুই হাজার ৭ শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল সোমবার।
এবার রেকর্ড ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন, দলের প্রার্থী ছিলেন ১৯৮৫ জন। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়েন ৭৩১ জন।
ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিব মাহবুবার রহমান সরকার বলেন, “মনোনয়নপত্র বাতিলের বিভিন্ন কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ১ শতাংশের স্বাক্ষর সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।”
নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, যাচাই বাছাইয়ে সমর্থন তালিকার মাত্র ১০ জনের সত্যতা যাচাই করা হয় দৈবচয়ন ভিত্তিতে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এসব ভোটার ভুয়া, স্বাক্ষরে মিল থাকে না, সঠিকতা পাওয়া যায় না। তখনই তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
তবে অনেকের এ নিয়ে আপত্তি আছে। কবির মিয়া নামের একজন বাদ পড়া প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “কয়েকজন ভোটার অস্বীকার করায় আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ভোটার স্বাক্ষরের পদ্ধতিটা বাতিল চাই আমরা। এ বিধানের কারণে সবাই হয়রানির শিকার হচ্ছে।”
তিনি বলছেন, এবার প্রার্থিতা ফিরে পেতে ‘অস্বীকার’ করা ভোটারকে আপিল শুনানিতে উপস্থিত করাবেন তিনি।
এ স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করেন, তার সমর্থন তালিকার স্বাক্ষরের একটি পৃষ্ঠা গ্রহণ করা হয়নি বাছাইয়ের সময়। ‘স্থানীয়দের প্রভাবে’ এমন করা হয়েছে বলে তার ধারণা।
দেড় দশক আগে নির্বাচনী আইন সংস্কার করে স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের ১ শতাংশের সমর্থনযুক্ত তালিকা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় তালিকা থেকে দ্বৈচয়নের ভিত্তিতে ১০ জন ভোটারের তথ্য যাচাই করা হয়।
তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ ছিল।
২৯ দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র মিলে দুই হাজার ৭১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এবার।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ ৪ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় শেষ হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর।
ভোটের প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
আপিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভিড়
যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে মঙ্গলবার থেকে তাদের আপিল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসারের আদেশে (মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশে) কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
ইসির জনসংযোগ জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, মঙ্গলবার প্রথম দিনের কার্যক্রমে মোট আপিল আবেদন জমা পড়েছে ৪২টি। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ২৬ জন, বাকিরা দলীয়।
আপিল আবেদনকারীদের মধ্যে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ও সমর্থনসূচক দলিলে গরমিল পাওয়ায় ২৩ জনের, আয়কর রিটার্ন না থাকায় পাঁচজনের, মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকায় চারজনের, ঋণখেলাপির কারণে পাঁচজনের এবং গ্যাস-বিদ্যুতের বিল না দেওয়ায় তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এসব আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত পক্ষে না গেলে অনেক প্রার্থী আবার উচ্চ আদালতেও ধরনা দেবেন।
সিদ্ধান্ত দেবে ইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে আপিল শুনানি হবে নির্বাচন কমিশনে। এসব আবেদনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্ত শুনানি করার পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
সিইসি মঙ্গলবার বলেন, "নমিনেশন সাবমিশনের পরে সংক্ষুব্ধ যারা, তারা আপিল করতে পারেন। আমাদের যারা রিটার্নিং অফিসার, পরীক্ষা নীরিক্ষা করে মনোনয়নপত্র একসেপ্ট করে নেন। কিছু কিছু প্রত্যাখান করেন উনারা। যারা প্রত্যাখ্যাত হন, যাদের নমিনেশন পেপার গ্রহণ করা হয়, দুটোর বিরুদ্ধেই কিন্তু আপিল করা যায়।"
তিনি বলেন, ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন যে কেউ। সেজন্য ১০টি অঞ্চল ঠিক করা হয়েছে। ওই অঞ্চলভিত্তিক আপিল দায়ের করতে হবে।
"আপিল শুনানি হবে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর। আমরা তখন পুরো কমিশন বসে আপিলগুলো শুনব। শুনে আমরা সিদ্ধান্ত দেব।"
পুরনো খবর
নির্বাচন: বাছাইয়ে বাতিল ৭৩১ মনোনয়নপত্র