বাতিলের এ তালিকায় স্বতন্ত্রই বেশি; রয়েছেন আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী এবং বর্তমানের কয়েকজন সংসদ সদস্য।
Published : 04 Dec 2023, 09:05 PM
চার দিনের যাচাই বাছাই শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের এক চতুর্থাংশেরও বেশি বাতিল হয়েছে; বৈধ হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫টি।
সোমবার বাছাইয়ের শেষ দিন নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, দুই হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বিভিন্ন কারণে ৭৩১টি বাতিল হয়েছে, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।
বাতিলের এ তালিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চার র্থীসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। স্বতন্ত্রদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদও রয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিলে রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীরা কমিশনে আপিল করতে পারবেন। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীরা মঙ্গলবার থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। আপিলের চূড়ান্ত ফলাফল জানানো ইসি জানাবে ১৫ ডিসেম্বর।
সোমবার ৩০০ আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে মাঠ পযায়ের একীভূত এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
বাদ পড়ার অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১% স্বাক্ষরে গড়মিল, ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি, প্রস্তাবক-সমর্থক সঠিক না হওয়া, দলীয় প্রার্থী হয়েও প্রত্যয়ন না থাকা, হলফনামায় অসত্য তথ্যসহ নানা অসঙ্গতি রয়েছে।
তবে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কতজন বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
এবার ২৯ দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরমধ্যে ৭৪৭ জন ছিলেন স্বতন্ত্র, বাকিরা ছিলেন দলীয় প্রার্থী।
সোমবার রাতে নির্বাচন ভবনে অশোক কুমার বলেন, “৩০০ আসনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ১৯৮৫টি মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।”
ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিব মাহবুবার রহমান সরকার জানান, মনোনয়ন বাতিলের বিভিন্ন কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১% এর অনুষঙ্গ।
“আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ১% এর স্বাক্ষর সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হযেছে। ঋণ খেলাপি, বিলখেলাপি, দ্বৈত নাগরিকত্বসহ নানা কারণে।
ইসির ১০ অঞ্চলে ৩০ আসন | দাখিল মনোনয়নপত্রের সংখ্যা | বাছাইয়ে বাতিল | বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা |
---|---|---|---|
রংপুর | ২৭৮ | ৬৯ | ২০৯ |
রাজশাহী | ৩৬৯ | ১১০ | ২৫৯ |
খুলনা | ৩২২ | ৯৪ | ২২৮ |
বরিশাল | ১৭৩ | ৩৮ | ১৩৫ |
ময়মনসিংহ | ৩২৭ | ৮৪ | ২৪৩ |
ঢাকা | ৪৩১ | ১১৪ | ৩১৭ |
সিলেট | ১৬০ | ৩৫ | ১২৫ |
চট্টগ্রাম | ১৯৮ | ৪৪ | ১৫৪ |
কুমিল্লা | ৩৫৫ | ১২০ | ২৩৫ |
ফরিদপুর | ১০৩ | ২৩ | ৮০ |
সর্বমোট ৩০০ আসন | ২৭১৬ টি | ৭৩১টি বাদ | ১৯৮৫টি বৈধ |
সবশেষ একাদশের সংসদ নির্বাচনে তিন সহস্রাধিক মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। সেবারও বাছাইয়ে ৭৮৬ জনের বাদ যায়, বৈধ হয় ২২৭৯টি।
ইসিতে যেভাবে আপিল, সুযোগ ৫-৯ ডিসেম্বর
২ হাজার সাতশ’ এর বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে আপিল গ্রহণ শুরু হবে নির্বাচন কমিশনে।
ইসির আইন শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুছ সালাম জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে) নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র ০১ সেট ও ছায়ালিপি ০৬ সেটসহ) আপীল দায়ের করতে পারবেন।
স্বতন্ত্রের রেকর্ড: প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার না শঙ্কার
৩২ নয়, ভোটে আসা দলের সংখ্যা ২৯টি: ইসি
এজন্য ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে নির্বাচন ভবনে। ১০ জন কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে।
তিনি বলেন, ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ করে আপিল শুনানি হবে ক্রমানুসারে। আপিল আবেদনগুলো শুনানি শেষে আপিলের ফলাফল মনিটরে প্রদর্শন, রায়ের পিডিএফ কপি ও আপীলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ই-মেইল একাউন্টে প্রেরণ এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
এছাড়া আপিলের রায়ের অনুলিপি নিম্নোক্ত সিডিউল মোতাবেক নির্বাচন ভবনের
অভ্যর্থনা ডেস্ক হতে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির আবেদনের ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে।
১৫ নভেম্বর ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ছিল।
>> এবারের সংসদ নির্বাচনে ২৯টি দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র মিলে দুই হাজার ৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
>> মনোনয়নপত্র বাছাই চলে ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
>> রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
>> রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
>> ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।