জনগণ বলছে ‘বিদায় হও’, সরকারের উদ্দেশে ফখরুল

‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বললো বা যুক্তরাজ্য কী বললো বা ভারত কী বললো- এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নাই,” বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2023, 02:28 PM
Updated : 4 August 2023, 02:28 PM

সরকার হটানোর আন্দোলনে ‘মরণপণ যুদ্ধের’ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের এক সমাবেশে নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘এবার সেই মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ। মরণপণ যুদ্ধ করে এবার আমাদের সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে, এদেরকে সরাতে হবে।”

বর্তমান সরকারকে ‘স্বৈরাচার’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নাই। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নাই। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, জাতির অস্তিত্বের জন্য আজকে আমাদের সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র চাওয়া।”

বর্তমান সরকার ‘বিদায় হলেই’ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা-মোকাদ্দমা ও রায় সব কিছুর অবসান হবে বলেও মনে করেন তিনি। এজন্য মনের মধ্যে দৃঢ়তা নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এগুলোকে যদি আমাদের অপসারণ করতে হয়, দূর করতে হয় তাহলে একটাই মাত্র পথ- এই সরকারকে সরাতে হবে।

‘‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব সেজন্য শ্লোগান দিয়েছেন। কী সেই শ্লোগান? দেশ যাবে কোন পথে?”

এসময় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে উচ্চস্বরে বলেন, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। সবাই থামার পর বিএনপি মহাসচিব আবার শ্লোগান ধরেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের ‘ফরমায়েসি’ রায়ের প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। মহানগর ও জেলা সদরেও এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

বৃষ্টির মধ্যেই বিকাল ৩টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। চারটি ট্রাক একত্রিত করে তৈরি করা হয় অস্থায়ী খোলা মঞ্চ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুম্মার নামাজের পর থেকে কার্যালয়ের সামনে হাজারো নেতাকর্মী সমবেত হয়। সড়কে জমা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা বক্তব্য শোনেন। নেতাদের অনেককে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়।

বক্তৃতার সময় এমন বিরূপ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এই যে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না পুলিশ হানা দিচ্ছে।“

তার অভিযোগ, ‘‘এরা দিনের বেলা বলবে আমরা তো ভাই সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে চাই, আমরা কারও প্রতি কোনো অন্যায় করছি না। অথচ হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হলে আবার সবাইকে গ্রেপ্তার করে। কত ভীরু হলে, কাপুরুষ হলে, ভয় পেলে তারা এটা করতে পারে।”

তিনি ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ‘নির্বাচনের খেলায়’ নামার আহ্বান জানান।

‘যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ভারত কী বলেছে এটা বিবেচ্য নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বললো বা যুক্তরাজ্য কী বললো বা ভারত কী বললো- এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নাই। আমাদের দরকার আমাদের জনগণ কী বলছে।

“আমাদের জনগণ পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নাই। যেতে হবে তোমাকে। এই সরকারকেই যেতেই হবে।”

‘সাজা দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না’

ইতিহাস ও অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং ইসলামে জবাবদিহিতার উদাহরণ টেনে বিচার বিভাগের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজকে তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমানসহ অন্যান্য যাদেরকে আপনারা সাজা দেয়ার জন্য ঠিক করেছেন তাদেরকে সাজা দেয়ার আগে চিন্তা করবেন এদেশের মানুষ আপনাদেরও হিসাব নেবে, জবাবদিহি করতে হবে একদিন।”

সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর কারাদণ্ড এবং ঈশ্বরদীতে বিএনপির স্থানীয় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের মামলাগুলোকে ‘মিথ্যা মামলা’ দাবি করে তিনি এসব ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এভাবে ৭০ বছর সাজা দিয়ে, মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে আপনারা শেষ রক্ষা করতে পারবেন না।”

মির্জা ফখরুল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের টিকে থাকার কষ্টের বর্ণনা দিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরেন।

সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সমাগত। কারণ এই সরকার জানে, যারা জনগণের এই উপস্থিতিতে, জনগণের এই চাপের মুখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা রাজনীতিকে ধবংস করে যুব সমাজকে ধবংস করে রাষ্ট্রের মালিক হবে আর আমরা প্রজা হয়ে থাকার জন্য যুদ্ধ করি নাই। যুদ্ধ একাত্তর সালে শুরু ‍হয়েছে। সেই যুদ্ধ এখনও চলমান। এই যুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।”

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুল রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত ‍উল্লাহ বুলু, আহমেদ আহমেদ আজম খান, এজেডেএম জাহিদ হোসেন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।