এখন সরব না হলে একদিন আপনাকেও ধরবে: ফখরুল

“এই সরকার গণতন্ত্র মানে না, এই সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2023, 02:19 PM
Updated : 1 April 2023, 02:19 PM

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সব মানুষকে সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আমরা আছি বলে এখনও কথা বলছি, এদেশের মানুষ কথা বলছে। তাই আমি প্রথমেই যে সাবধান বাণী উচ্চারণ করতে চাই সব মানুষের কাছে- বন্ধুগণ এখনো সর্তক হোন, সজাগ হোন। যারা আজকে ক্ষমতাকে বেআইনিভাবে জোর করে ধরে রাখার জন্য ভিন্নমত ধারণকারী মানুষকে হত্যা করছে, গুম করছে, নির্যাতন করছে, কারাগারে নিচ্ছে তাদের হাত থেকে আপনারাও মাফ পাবেন না।

“কারণ একদিন না একদিন আপনাদেরকেও ধরবে। তাই সকল মানুষের দায়িত্ব সকলে মিলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।”

শনিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেখেন- মতিউর রহমান সাহেব এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক- তার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দিয়েছে, পত্রিকাটির রিপোর্টার শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।”

জার্মানির নাৎসিবিরোধী ধর্মতত্ত্ববিদ মার্টিন নিম্যোলারের বহু উদ্ধৃত ‘ফার্স্ট দে কেইম…’ আবৃত্তি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কবিতাটি খুবই প্রাসঙ্গিক। এটা পড়ার লোভ আমি সামলাতে পারছি না। কবিতাটি হচ্ছে- ওরা প্রথমে সোশালিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি কোনো কথা বলিনি। কারণ আমি কমিউনিস্ট নই। তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম কারণ আমি শ্রমিক নই…

“শেষবার ওরা ফিরে এল, আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। আমার পক্ষে কেউ কোনো কথা বলল না। কারণ কথা বলার মতো কারণ আর কেউ ছিল না। আপনারা ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন। জামার্নের ইহুদিদের হত্যা করার জন্য হিটলার ও হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী যখন একেক করে কমিউনিস্ট, সাংবাদিক, লেখক যারা সত্য কথা বলে, যারা জনগণের কথা বলে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল; তখন কোনো কোনো মানুষ তারা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেদিন কোনো বিরোধিতা করেনি, কোনো কথা বলেনি। তাকে যখন ধরে নিতে আসলো, তখন কথা বলার কেউ ছিল না।”

ফখরুল বলেন, “আজকে ওই অবস্থা এখানে হয়েছে। আজকে একেক করে যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে তাদেরকে তারা ধরে নিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের গুম করেছে, হত্যা করেছে। শ্রমিকদের ধরে নিয়ে গেছে, গুম করেছে হত্যা করেছে, ভিন্নমত পোষণ করেছে, গুম করেছে, হত্যা করেছে।

“এরপর পরে আপনাদের মনে আছে আমার দেশ’র সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে, শফিক রেহমানকে একইভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে, আসাদ সাহেবকে (দৈনিক সংগ্রাম) তাকে দীর্ঘকাল কারাগারে আটক করে রেখেছিল। তখন অনেকে কোনো কথা বলেননি।”

‘ওদের আগাম নির্বাচনের ভিন্ন কৌশল’

মির্জা ফখরুল বলেন, “এরা সহজে যাবে না। গত পরশু দিন ইলেকশন কমিশনে একটা মিটিং হয়েছে। সেই মিটিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, প্রয়োজনে আগাম নির্বাচনের জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অর্থাৎ তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। যে আগাম নির্বাচন করে জাতিকে বোকা বানিয়ে তারা আগের মতো নিজেদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে।

“আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, এবার আর জনগণ আপনাদের কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না, আপনাদেরকে কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এবার জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে আপনাদের সমস্ত চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেবে।”

ক্ষমতাসীনদের ‘ফ্যাসিস্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকার গণতন্ত্র মানে না, এই সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরত্ব দেয় না এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং যেসব নির্বাচন করেছে কোনো ভোট ছাড়াই, জোর করে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে।

“তাদেরকে কারা সাহায্য করছে? আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণের বেতনের আপনার যাদের জীবন চলে, তারা আজকে ওদের সহযোগিতা করছে। এদেশের প্রশাসন, এদেশের পুলিশ, এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা তারা এই বেআইনি, অবৈধ সরকারকে জনগণের সাথে যাদের সম্পর্ক নাই, তাদেরকে টিকিয়ে রাখছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, এদেশের মানুষ কখনোই অন্যায়কে মেনে নেয়নি, এদেশের মানুষ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে এবং তারা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।”

সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবি, বিদ্যুৎ-গ্যাস-নিত্যপণ্যের ঊধর্বগতি এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে দুপুর ২টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি হয়। এ দিন ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে একযোগ কর্মসূচি হয়েছে।

রাজধানীতে ‘১২ দলীয় জোট’ বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট আলাদাভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য পল্টন মোড়ে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি পান্থপথে দলের কার্যালয়ের সামনে এবং ‘গণফোরাম-পিপলস পার্টি’ আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে এই কর্মসূচি করে।

‘বিবিএসের তথ্য মিথ্যা’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে আমাদের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। আজকে না খেয়ে থাকে। জিনিসপত্রের দাম এখানে অনেকে বলেছেন, ব্যানারে লেখা আছে…। আজকে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান আছে… বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস তাদেরকে দিয়ে মিথ্যা সমস্ত তথ্য তৈরি করে জনগণের সামনে এবং বিশ্বের সামনে তারা দেখাতে চায় যে, এই সরকারের উন্নয়ন এমনভাবে বাড়ছে- সেখানে বেকারের সংখ্যা নাকি গত তিন বছরে কমে গেছে আরও ২৬%।

“কী মিথ্যা তথ্য! এটা আমার কথা নয় শুধু, এদেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা তারা বলছেন যে, এগুলো সঠিক তথ্য নয়, এগুলো সব সাজানো তথ্য। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।”

১০ দফা দাবি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা অবশ্যই রাস্তায় থাকব। জনগণ যেভাবে জেগে উঠেছে আমরা নিশ্চিত এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আসুন আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দল, সব রাজনৈতিক সংগঠন, সকল ব্যক্তি যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, গণতন্ত্রকে ভালোবাসি, স্বাধীনতাকে ভালোবাসি তারা আজকে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় মনোস্টার যাকে বলা হয়, এই অবৈধ সরকারকে জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরাজিত করে আমরা জনগণের সরকার, জনগণের বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই সরকার- আমাদের যে বর্তমান সংকট, এই সংকট থেকে আর উত্তরণ করতে পারবে না। তাই অনতিবিলম্বে এই সরকারকে বিদায় করাই হচ্ছে এদেশের জনগণের একমাত্র আওয়াজ।

‘‘আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র এক সাথে যায় না। আর বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছে, গণতন্ত্রকে এনেছে। তাই বিএনপিকে এদেশের জনগণকে নিয়ে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে হবে। ইনশাল্লাহ প্রস্তুতি সম্পন্ন।

“আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করে নির্বাচন করব। আজকে এই অবস্থান কর্মসূচি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের দাবি আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, মহিলা দলের আফরোজা আাব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ।