“বিএনপি মানে হচ্ছে শান্তি, বিএনপি মানে হচ্ছে গণতন্ত্র, বিএনপি মানে হচ্ছে সাধারণ মানুষের উন্নতি,” বলেন তিনি।
Published : 20 Feb 2024, 07:22 PM
বাংলা ভাষা আন্দোলন জনগণকে ‘মাথানত না করার’ শিক্ষা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার।
তিনি বলেছেন, “ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই ভাষা আন্দোলন আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নেব…, মাথানত না করা।
“আমাকে কথা বলতে দিতে হবে, আমার অধিকার আমাকে দিতে হবে, আমার ভাষা আমাকে বলতে হবে… ওই কথা ধরেই ভাষা আন্দোলন, ওই লাইন ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।”
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জমির উদ্দিন বলেন, ‘‘বাংলা ভাষার আন্দোলন এটা কোনো গতানুগতিক আন্দোলন ছিল না। এটা আদর্শগত আন্দোলন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। এই বাংলা ভাষায় আমি কথা বলি, সেখানে আমার ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা না করে অন্য একটা ভাষা উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল; সেটাকে ছাত্র সমাজ-রাজনীতিবিদ-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-খেটে খাওয়া মানুষরা প্রতিবাদ করেছিলেন, শুরু হয়েছিল আন্দোলন। এর উপরে ভিত্তি করেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গড়ে উঠেছিল।”
সাবেক এ স্পিকার বলেন, ‘‘আইন শাসন, বিচার বিভাগের কথা এখানে কেউ কেউ বলেছেন। যদি দেশে গণতন্ত্র না থাকে, আইনের শাসন না থাকে- তাহলে দেশে বিশৃঙ্খলা হতে বাধ্য।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে জমির উদ্দিন বলেন, “আজকে আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছি। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে।
আজকে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান তিনি বিএনপির হাল ধরেছেন। তিনি দেশে আসতে পারছেন না।
“যদি আইনের শাসন দেশে থাকতো, তাহলে তিনি আসতে পারতেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতো না। আজকে আমাদেরকে জনগণের ঘরে ঘরে যেতে হবে এবং সবাই মিলে বলব, বিএনপি মানে হচ্ছে শান্তি, বিএনপি মানে হচ্ছে গণতন্ত্র, বিএনপি মানে হচ্ছে সাধারণ মানুষের উন্নতি। ইনশাল্লাহ আবার দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘মাতৃভাষা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া… এটা গত শতাব্দীর একটি শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত যে- একমাত্র জাতি আমরা, যাদের ভাষার জন্য জীবন দিতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে। কোনো দেশকে নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য এভাবে জীবন দিতে হয় নাই বা নির্যাতিত বা অত্যাচারিত বা কারাবরণ করতে হয় নাই।
‘‘পাকিস্তানিরা আমাদেরকে একটি উপহার দিয়েছে শহীদ মিনার। আর আজকে শেখ হাসিনার বদৌলতে ঘরে ঘরে শহীদ মিনার হওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে। যদি আপনি গুম-খুনের হিসাব করেন, আপনি যদি ’৭৫ সালের আগ পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের কথা চিন্তা করে, বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যার হিসাব করেন; তাহলে দেখা যাবে প্রতিটি ঘরে ঘরে শহীদ মিনার ওরা (আওয়ামী লীগ) উপহার দিয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘‘এখানে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, ’৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদের মাধ্যমে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছিল… পরবর্তীতে একাত্তরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম এবং সেই ধারাবাহিকতায় আজকে দেশ স্বাধীন হবার প্রায় ৫৩ বছর পরে এসে বাকি আমরা এমন একটি ক্রান্তিলগ্নে উপনীত হয়েছি, যেখানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত।”
তিনি বলেন, “আজকে যদি বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদ- তাদের প্রশ্নে কি জবাব দেব আমরা? তারা যদি প্রশ্ন করে, আজকে এই বাংলাদেশের জন্য কি আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম, যেটা তো হতে পারে না।
“আসুন, আজকে নতুন করে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, এদেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এদেশে মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমরা রাজপথে ছিলাম, রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।