‘নির্বাচনের খেলা’ এবার খেলতে দেওয়া হবে না: ফখরুল

এক দফা-এক দাবিকে ‘গগণবিদারি করতে হবে, এটাকে গণভবনে- বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে’, বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2023, 01:27 PM
Updated : 11 August 2023, 01:27 PM

সরকার পদত্যাগ না করলে ‘রাজপথে গণবিপ্লবে’র হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অপরিচিত দল নিয়ে এবার আগের মতো ‘ডিগবাজির’ ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’ খেলতে দেয়া হবে না।

শুক্রবার বিকালে বাড্ডায় গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এদিন ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপি ও সমমনা জোট।

রাজধানীতে বিএনপির গণমিছিল দুটির একটি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং অপরটি মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে কমলাপুরে বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের কাছ থেকে মালিবাগ রেল গেইটে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলের কারণে ঢাকার প্রধান এ দুই সড়কের পাশাপাশি আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ছুটির দিনের বিকালে ঘর থেকে বেড়িয়ে বেকায়দায় পড়েন নগরবাসী।  

বাড্ডার মিছিলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং দক্ষিণেরটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নেতৃত্বে দেন। মিছিল দুটিতে হাজারো নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে সরকারবিরোধী শ্লোগান দেন।

বাড্ডায় খোলা ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই গণমিছিল কেন? একটাই দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এক দফা এক দাবি, এটা জোরে বলতে হবে। এটাকে গগণবিদারি করতে হবে, এটাকে গণভবনে পৌঁছাতে হবে, এটাকে বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।

‘‘এখানে সকলকে বলছি, আসুন, আমরা যে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছি, যে নতুন লড়াই শুরু করেছি সেই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হওয়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এই গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবার তাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই যে, তোমাদের দিন শেষ, পদত্যাগ কর।”

নেতাকর্মীদের শ্লোগানের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে এর ‘ফয়সালা রাজপথে’ হবে আবারও তুলে ধরেন তিনি।

‘আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’

সংসদ, প্রশাসন, বিচার বিভাগকে এ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছেন আমাদের বিচার বিভাগকে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদেরকে কারাগারে পাঠায়, আটকে দেয়, সাজা দেয়। তাতে কী আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না, যাবে না।

“এই মানুষকে এবার তাদের গণতন্ত্রের অধিকার আদায় না করে তারা ঘরে ফিরে যাবে না।”

‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’ আর নয়

বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, ‘‘এই নির্বাচন কমিশন, লজ্জাহীন এরা। তাদের অধীনে কি নির্বাচনে যাবে? দুইটা দলকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, নিবন্ধন দিয়েছে, কেউ চিনে না। আপনারা কেউ চেনেন, চেনেন?”

এসময়ে নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে।

তিনি বলেন, ‘‘কেন (নিবন্ধন) দিয়েছে? যে এদেরকে দিয়ে তারা একটা নির্বাচন নির্বাচন খেলা করবে, তাই না। এই খেলা এবার খেলতে দেওয়া হবে না, সেই খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।

‘‘এরা (সরকার) মনে করেছেন এভাবে ক্যারিকাচার করে, ডিগবাজি খেয়ে খেয়ে ’১৪ ও ’১৮‘র মতো যে নির্বাচন করেছেন আবার ওই নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় যাবে। দেশের মানুষ কী যেতে দেবে? আর যেতে দেবে না।”

‘৩১ দফায় সম্মান পাবে মানুষ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা সরকার পদত্যাগের এক দফা দিয়েছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। যেখানে আমরা একটা নতুন রাষ্ট্র তৈরি করব, যেখানে মানুষ যেন সন্মানের সঙ্গে ইজ্জতের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করব।

“সবাই দুই বেলা খেতে পারে তার ব্যবস্থা করব, আমার যুবক ছেলেরা যাতে চাকরি পায় তার ব্যবস্থা করব, সবাই যেন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করব।“

দক্ষিণের সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘এদেশের নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না- হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

সরকারের ‘দমননীতির’ বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে সোচ্চার হয়েছে দাবি করে তিনি রাজপথেই এ ফয়সালা করার অঙ্গীকার করেন।

জোটের মিছিল

সরকার হটাতে আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে এর আগে বিএনপি ও সমমনা জোট ১৮ ও ১৯ জুলাই সকল মহানগর ও জেলা সদরে পদযাত্রা, ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি করে। এরই ধারাবাহিতকায় শুক্রবার পৃথক কর্মসূচি হয়।

জোটের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাব, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন, এলডিপি তেজগাঁও এফডিসির কাছে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগ, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোড এবং এনডিএম মালিবাগ থেকে মিছিল করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বাড্ডায় বিএনপির মহানগর উত্তরের সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, শাহাজাদা সম্রাট, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্যামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল বক্তব্য রাখেন।

সভাপতিত্ব করেন এ ইউনিটের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আমিনুল হক।

কমলাপুরের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য দেন। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।

মিছিলে তারা ছাড়াও অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, ইশরাক হোসেন।