বাদের তালিকায় আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী, বেশির ভাগই স্বতন্ত্র

এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন যাচাই করতে গিয়ে গড়মিল পেয়েই অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2023, 06:30 PM
Updated : 3 Dec 2023, 06:30 PM

যাচাই বাছাইয়ের তৃতীয় দিন সারাদেশে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ দেখাতে না পারাই মূলত এর কারণ।

আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা, এদের একজন বর্তমান সংসদ সদস্য। দলের আরও দুইজন প্রার্থীর মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

এছাড়া ক্ষমতাসীন জোটের কয়েকজন সংসদ সদস্যদের মনোনয়নও বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণ বা ঋণের জামিনদার থাকার কারণে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে শুক্রবার। তবে তৃতীয় দিন রোববারই মূলত প্রার্থীদের উপস্থিতিতেই তাদের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এই যাচাই বাছাই চলবে সোমবারও।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এদিন যাচাই বাছাইয়ের ফলাফল এলেও ঢাকার আসনগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সোমবার এসব আসনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মহানগরের ১৫টি আসন এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মহানগরের বাইরের পাঁচটি আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সকাল ৯ টা থেকে এই যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ সময় প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, প্রস্তাবক, সমর্থক বা প্রার্থীর প্রতিনিধিসহ সর্বোচ্চ ৩ জনকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যাচাই বাছাইয়ে যাদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে বা হবে, তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন। এই আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তির সময় নির্ধারণ করা আছে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধেও প্রার্থী বা সংক্ষুব্ধ যে কেউ আপিল করতে পারবেন।

এখন পর্যন্ত কম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

রোববার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ খানেক মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে। মাঠপর্যায়ের একীভূত তথ্য এখনও পাইনি আমরা। সোমবার নির্ধারিত দিন পার হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাব। তখন বলা যাবে।” 

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বাতিল যেখানে যেখানে

কক্সবাজার-১ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে এনে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। খেলাপি ঋণ থাকার কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

তবে সালাহউদ্দিন দাবি করেছেন, গত ২৩ নভেম্বর হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ঋণখেলাপির তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে বলেছে। তবু ক্রেডিট ইনফরমেশন রিপোর্টে (সিআইবি) খেলাপি দেখিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন।

এই আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে।

একই কারণে বাতিল ঘোষিত হয়েছে নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের মনোনয়ন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, “৩০ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ী মামুনুর রশিদ কিরণ একজন ঋণখেলাপি ছিলেন। তাই তার মনোনয়নপত্র আইন অনুযায়ী বৈধ বলার সুযোগ নেই।”

তবে মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে যতগুলো ঋণ আছে তার সবগুলোই নিয়ম অনুযায়ী হালনাগাদ আছে। সব কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। সবকিছু বলার পরও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন বাতিল করেছেন। আমি নির্বাচন কমিশন বরাবর আপিল করব। আশা করি মনোনয়ন ফিরে পাব।”

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তিনবার ছাড় দিলেও এবার আওয়ামী লীগ তার প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানকে ভোটের মাঠ না ছাড়তে বলেছিল। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছেন।

তিনি জানান, ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতির কাগজ দেখাতে না পারায় নাসিরুল ইসলাম খানের প্রার্থিতা প্রথমে স্থগিত রাখা হয়। পরে বিকালেও কাগজ জমা না দেওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়।

বর্তমান সংসদ সদস্যরাও কাটা

ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও বজলুল হক হারুনকে পরে হতাশ করেছে তার দল। বিএনপি থেকে ভাগিয়ে এনে শাহজাহান ওমরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

যাচাই বাছাইয়ে শাহজাহান ওমরের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হলেও বাতিল হয়েছে হারুনের। তার এই বাদ পড়ার কারণ দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন।

চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে। তিনি এবার দলের মনোনয়ন পাননি।

দিদারুল মনোনয়নপত্র জমা দেন দলীয় প্রার্থী হিসেবে। তবে এর সঙ্গে দলীয় প্রধান স্বাক্ষরিত কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় তা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

জামিনদার হিসাবে ঋণ খেলাপির কারণে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারার ভাইস চেয়ারম্যান।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন জানান, এফিনিটি কমিউনিকেশন লিমিটেডের জামিনদার হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকায় তার নাম রয়েছে।

গত নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জিতে আসা বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে নোয়াখালী-৪ আসনে। তিনি এবার দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী মান্নান ঋণ খেলাপি।

তবে সেখানে উপস্থিত মান্নানের প্রতিনিধি মো. আবু সুফিয়ান খান বলেন, “আমাদের প্রার্থীর সব মামলা স্থগিত এবং ঋণ হালনাগাদ রয়েছে। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে।”

সিলেট-২ আসনের গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “মোকাব্বির খান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে তার মনোনয়নপত্রে নিজেই সই করেন। কিন্তু তিনি যে দলের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।”

১ শতাংশ ভোটারের ফেরে বাতিল তারা

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই ঝরে পড়ছেন আইনের ফেরে।

আইন অনুযায়ী একটি নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের এক শতাংশের সমর্থনের প্রমাণ দিতে হয় মনোনয়নের সঙ্গে। কিন্তু দৈবচয়নের ভিত্তিতে গোটা দশেক ভোটারের বিষয়টি যাচাই বাছাই করে কারও ক্ষেত্রে গড়মিল পেলে মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

যাচাই বাছাইয়ে দেখা যায়, কোথাও একজন ভোটার সই করার কথা অস্বীকার করেছেন, কোথাও দেখা গেছে সেই ভোটার অন্য নির্বাচনি এলাকার, কোথাও ভোটারের ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি, মৃত ভোটারের পক্ষেও সই পাওয়া গেছে।

এক শতাংশ ভোটারের ফেরে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শরীফ আহাম্মদ সাদীর।

নেত্রকোণা-৪ আসনে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের ছাত্রনেতা শফি আহমেদ, নেত্রকোণা-৫ আসনে কর্নেল আবু তাহেরের ছোট ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম-১ আসনের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে এই কারণে।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকায় মিল না পেয়ে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, তিনটি নমুনা ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়নি। আর একজন ভোটার নন। তালিকায় ললিতা মান্ডি নামের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের ভোটার।

মাহি বলেন, “কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে, প্রত্যেকে (ভোটার) নিজে উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর করেছে। সেই ভিডিও আছে। আমি প্রমাণ দেখিয়ে আপিল করব।”

নানা জটিলতায় বাতিল দলীয় প্রার্থী

পাবনা-২ আসনে বিএনএম প্রার্থী শিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “ডলি সায়ন্তনীর ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।”

কিশোরগঞ্জ-২ আসন হলফনামায় তথ্য গোপন করায় গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফ আলী এবং প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী অন্য আসনের ভোটার হওয়ায় তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আহসান উল্লাহর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।

পিরোজপুর-৩ আসনে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আব্দুল লতিফ সিরাজীর মনোনয়ন বাতিল হয়। ঋণ খেলাপি হওয়ায় বাদ পড়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রশান্ত কুমার হাওলাদার।

বরিশাল-১ আসনের জাকের পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ মোরশেদ জামান হলফনামা সঠিকভাবে দাখিল না করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

একই কারণে বাতিল হয়েছে বরিশাল-২ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন ও জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী আলবার্ট বাড়ৈর মনোনয়নপত্র।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মনোনয়নে প্রার্থী হন হিরো আলম। তবে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখেন, হিরো আলম যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “দলীয় প্রার্থী হলেও হিরো আলম স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেন। রাজনৈতিক দলের স্থানে হিরো আলম লিখেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’। দলীয় মনোনয়নে মূল কপি তিনি জমা দেননি। ফটোকপি দিয়েছেন। এটা একটি বিষয়।”

হিরো আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “এটা কোনো বিষয় নয়; এর আগেও বাতিল করেছিল। হাই কোর্ট থেকে রায় এনেছি, এবারও তাই করব।”

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে জাকের পার্টির রেজাউল করিম এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সোহেল রানার মনোনয়নও বাতিল হয়েছে নানা জটিলতায়।

বরিশাল-১ আসনের জাকের পার্টির মোহাম্মদ রিয়াজ মোরশেদ, বরিশাল-২ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন, বরিশাল-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির খান সাগর, মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিয়া ও নূরে আলম শিকদারের মনোনয়নও বাতিল হয়েছে।

ভোটে এসে বিএনপি থেকে বহিষ্কার, মনোনয়নও বাতিল

ভোটে আসার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবীবকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন টাঙ্গাইল-৫ আসনে। কিন্তু সেই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে এক শতাংশ ভোটারের সই না মেলায়।

জমা দেওয়া ভোটারের স্বাক্ষরের মধ্যে ১০টি যাচাই-বাছাই করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ছয়জনের স্বাক্ষরে মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়াও একজন মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর দিয়েছেন।

টাঙ্গাইল-৬ আসনে ভোট করতে বিএনপি থেকে বিএনএমে যোগ দেওয়া খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে।

মুরাদ ছিলেন নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য। তিনি ভোটে আসার ঘোষণা দেওয়ার পর দল তাকে বহিষ্কার করে।

‘বিএনপির ভোট বর্জন ভুল’ উল্লেখ করে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে দলটির তিনবারের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে।

আখতারুজ্জামান বলেছেন, এতেই প্রমাণ হয়েছে তিনি কোনো আঁতাত করে ভোটে আসেননি।

মানিকগঞ্জে জাতীয় পার্টির সবার বাতিল

মানিকগঞ্জের তিনটি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে।

এরা হলেন মানিকগঞ্জ-১ আসনে হাসান সাঈদ, মানিকগঞ্জ-২ আসনে এস এম আবদুল মান্নান এবং মানিকগঞ্জ-১ ও মানিকগঞ্জ–৩ আসনের জহিরুল আলম। এর মধ্যে ঋণখেলাপির দায়ে আবদুল মান্নান ও জহিরুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। আর হাসান সাঈদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তিতাস গ্যাসের বিল বকেয়ার দায়ে।

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-৫ আসনে জাতীয় পার্টির শাহীদ আলম এবং খুলনা-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম মধুর মনোনয় বাতিল হয়েছে। মধুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে।

ঝুলে আছে সিদ্ধান্ত

সিটি করপোরেশনের গৃহকর বাকি থাকায় রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে সোমবার।

ওই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬ টাকা গৃহকর বকেয়া আছে।

বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। সোমবার যাচাই-বাছাইয়ের শেষদিন শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

কর পরিশোধের কাগজ দাখিল না করায় পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আটকে আছে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নূর কুতুবুল আলম জানান, সোমবার বিকাল ৪টার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এখন কী উপায়

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ১-৪ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে সোমবারও প্রার্থিদের বৈধ বা অবৈধ ঘোষণা চলবে।

যাচাই বাছাইয়ে মনোনয়ন গ্রহণ বা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবেন, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করার সুযোগ রয়েছে আইনে।

৫ থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা যাবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করা হবে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরদিন প্রতীক বরাদ্দ হলে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামতে পারবেন, চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮ টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন:

Also Read: মনোনয়ন বাতিল শুনে কেঁদে বললেন, ‘আমি আর বাঁচুম না’

Also Read: চট্টগ্রামে দিদারুল, গিয়াস, ছালামসহ ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

Also Read: গণফোরামের এমপি মোকাব্বিরের মনোনয়ন বাতিল

Also Read: মানিকগঞ্জে তিন আসনে জাপার ৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

Also Read: মনোনয়ন বাতিলের তালিকায় সৈয়দ নজরুলের ছেলে, আখতারুজ্জামান

Also Read: ঋণ খেলাপি: ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল

Also Read: মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণে সংক্ষুব্ধ? জেনে নিন আপিলের নিয়ম