রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ করবে দলটি।
Published : 23 Nov 2023, 03:25 PM
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সপ্তম দফায় আরো ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ ডেকেছে বিএনপি।
শুক্র ও শনিবার ছুটির দুই দিন বিরতি দিয়ে রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ করবে দলটি।
ষষ্ঠ দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “অবৈধ একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে এবং এই সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফার যে চলমান আন্দোলন, সেই আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলার প্রত্যয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
“আমি আস্থা রাখি, যে সমস্ত কর্মসূচি হয়েছে পূর্বে, সেই সমস্ত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আমাদের নেতা-কর্মী অত্যন্ত বীরত্বের সাথে, সাহসিকতার সাথে দৃঢ় প্রত্যায়ে আগামী ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করবেন।”
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ দিন বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা দলগুলোও একই কর্মসূচি দিচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে।
এর মধ্যে ছয় দফায় ১৩ দিন অবরোধ এবং দুই দফায় তিন দিন হরতাল করেছে দলগুলো। সপ্তাহের দুই ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ছাড়াও তিনটি মঙ্গলবার কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া হয়।
এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বা পিকেটিং সেভাবে চোখে পড়ছে না। মাঝেমধ্যে সকালের দিকে রিজভীর নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য। ২০-৩০ জন নেতাকর্মী তাতে অংশ নিচ্ছেন।
২৮ অক্টোবরের সংঘাতের পর দায়ের করা তিন ডজন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই কারাগারে রয়েছে। বাকিরাও অনেকে আত্মগোপনে থাকছেন। ভর্চুয়াল ব্রিফিং করে দলের কর্মসূচি জানাচ্ছেন রিজভী।
অবরোধ-হরতালের মধ্যে দূরপাল্লার বাস কম ছাড়লেও শহরের ভেতরে নগর পরিবহনের বাস, অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত যানবাহনের চলাচল প্রায় স্বাভাবিক। তবে প্রতিদিনই চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে।
এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হলেও রিজভী দাবি করছেন ‘সরকারের এজেন্সি’ দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দলের নেতা-কর্মীদের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অবশ্য আইনশৃঙ্খল বাহিনী একাধিক ঘটনায় আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আটকের কথা জানিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কিছু ভিডিও।
রিজভীর দাবি, এ পর্যন্ত তাদের সবগুলো অবরোধ কর্মসূচি ‘সফল’ হয়েছে, সেজন্য নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত বীরত্বের সাথে, সাহসিকতার সাথে এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করছেন। আমাদের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় আছেন, দাঁড়াচ্ছেন… এত প্রতিকূলতা, এত জুলুম নির্যাতন, একদিকে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, অন্যদিকে শেখ হাসিনার যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা রাজপথে যেভাবে নেমেছেন, এটি একটি সাহস ও বীরত্বব্যাঞ্জক ঘটনা।
“সাহসের ওপর ভর করে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসার আদর্শগত লড়াইয়ে তারা আছেন। তারা কোনো ভোগ-বিলাস, তারা কোনো অর্থ-কড়ির জন্য এই কর্মসূচি করছে না। তারা কর্মসূচি করছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।”
রিজভী বলেন, “এই নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেও বিজয় রথ ইনশাল্লাহ একদিন লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাবে, এই প্রত্যাশা আমি করছি।”