“ওনারা লাশ ফেলবেন এবং তার দায় চাপিয়ে দেবেন”, বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা।
Published : 31 Dec 2023, 04:37 PM
ভোট বানচালে লাশ ফেলার চক্রান্তের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, সে জন্য বিএনপিকে সাবধান করে দিয়েছেন তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি কাদেরের শঙ্কার কথা তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘‘আজকের পত্রিকায় দেখলাম ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার লাশ ফেলার পরিকল্পনা করছে। আমরা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে বলি, ‘সাবধান-সর্তক হয়ে যান। ওবায়দুল কাদের যা বলে তা কিন্তু করে’।”
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন হাঙ্গামার পেছনে সরকারকে দায়ী করে সাকি বলেন, “ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন ২৮ তারিখের মহাসমাবেশকে হেফাজতের পরিণতি দেবে। এজেন্ট দিয়ে বোমা ফুটিয়ে সেখানে পরিকল্পিত সহিংসতা করে তার সমস্ত দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে তারা ক্র্যাকডাউন করেছে।”
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনে গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশের পর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা তোপখানা রোড, পল্টন মোড় ও বিজয়নগর সড়কে মিছিল করে।
আগের দিন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কাদের বলেন, “তারা মানুষ পুড়িয়ে, আন্দোলনের নামে গাড়ি পুড়িয়ে, বাস পুড়িয়ে, ট্রেন পুড়িয়ে, মা ও সন্তানকে মেরে তাদের কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট তারা পাচ্ছে না। এখন তারা এই নির্বাচনের বিষয়ে লাশ বানানোর যে অপরাজনীতি, সে পথেও তারা যেতে পারে, এমন ইনফরমেশন আমরা পাচ্ছি।”
বরিশালের জনসভায় সিরাজ সংঘর্ষে মারা যায়নি: কাদের
সাকি বলেন, ‘‘তার মানে ওনারা লাশ ফেলবেন এবং তার দায় চাপিয়ে দেবেন। কাজেই আমাদেরকে আন্দোলনে সর্তক থাকতে হবে। ওবায়দুল কাদেরের এই সমস্ত পরিকল্পনা আন্দোলন ধবংসের চেষ্টা। যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে, সেই গণজাগরণকে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
“আমরা পরিষ্কার করে বলি, ওবায়দুল কাদের সাহেব ও আওয়ামী লীগ সরকারের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র মানুষের কাছে আজকে উন্মোচিত। আপনারা যত ষড়যন্ত্র করেন, আপনাদের মরুব্বিরা যতই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আপনাদেরকে ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেব; এই নির্বাচন বন্ধ করে মানুষের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চলবে।”
ভোট বানচালের চেষ্টা মোকাবিলার প্রস্তুতি আছে বলে বক্তব্য রাখায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালেরও কড়া সমালোচনা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা।
তিনি বলেন, ‘‘হাবিবুল আউয়াল এখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের ভাষায় কথা বলছেন। উনি নাকি মোকাবিলা করবেন। উনার ভেতরে যে রাজনৈতিক জ্বালা, উনি যে আওয়ামী লীগের দলদাস, সেটা আবারও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছে। কোথায় এই তথ্য পেলেন, এই তথ্য কীভাবে জানতে পেরেছেন, এটা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা তার দায়িত্ব হবে।
“আমি আশঙ্কা করি, বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-নাশকতা-অগ্নিসংযোগের নতুন নতুন একটি অলিজগতের ক্ষেত্র তৈরি করে নতুন নতুন ক্র্যাকডাউনের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য ওবায়দুল কাদের এ ধরনের কথা বলেছেন।”
মানুষকে জোর-জবরদস্তি করে ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মানুষের নাকি একদিনের মজুরি, অনেকে দুইদিনের, তিন দিনের মজুরির সমান টাকা দেওয়া হয়েছে।
“ভোটারদের হাতে পায়ে ধরছে ৭ তারিখে তাদের ভোট কেন্দ্রে হাজির করা যায় কি না।”
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাবও বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদও পল্টন মোড়, তোপখানা রোড ও বিজয়নগর সড়কে মিছিল করে পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে।