“একটা লোকের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে অথবা উত্তেজনা থেকেও হতে পারে। সে মারা গেছে কিন্তু হাসপাতালে। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি”, বলেন তিনি।
Published : 30 Dec 2023, 02:30 PM
বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দুই পক্ষের মারামারির সময়ে সিরাজ সিকদার নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তার ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওই ব্যক্তির শরীরে ‘আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে তিনি বলেছেন, “জনসভায় মারা যায়নি। হাসপাতালে মারা গেছে, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে, ডাক্তার তাই বলেছে।”
এ সময় পাশের চেয়ারে থাকা জাহাঙ্গীর কবির নানককে তিনি বলেন, “কি নানক, ঠিক আছে?”
শনিবার দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বলছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
সিরাজ সিকদার ‘সংঘর্ষে মারা যায়নি’ দাবি করে তিনি বলেন, “আর কয়টা নিহত হয়েছে, বলেন? নিহত হবার আর কোনো ঘটনা আছে কি? তার তো সংঘর্ষে মৃত্যু হয়নি। একটা লোকের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে অথবা উত্তেজনা থেকেও হতে পারে। সে মারা গেছে কিন্তু হাসপাতালে। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।”
বরিশালে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মাঠে শাম্মী আহমেদ ও পঙ্কজ নাথের অনুসারীদের মারামারি হয়। ওই সময়ে সিরাজ সিকদারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
৫৮ বছর বয়সী সিরাজ বরিশালের হিজলা উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের কোব্বাত সিকদারের ছেলে। পঙ্কজ ও শাম্মী অনুসারীরা সিরাজকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছেন। সিরাজের মৃত্যুর ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করেছেন তারা।
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।
সিরাজের মৃত্যুর পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কবির উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সংঘর্ষ দেশে দেশেই হয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশে আরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। তাই বলে সত্যকে আমরা অস্বীকার করব কেন?”
‘অপকর্মই বিএনপিকে খাদে ফেলেছে’
নির্বাচনকে যারা ‘নির্বাসনে’ পাঠাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “এই নির্বাচনকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ। এই নির্বাচনে উপস্থিতি কী হবে, শেখ হাসিনার জনসভাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে, সেখান থেকেও তারা টের পাচ্ছে না মানুষ কত উৎসবমুখর, মানুষ কত স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি নিজেরাই নিজেদের অপকর্ম, নেতিবাচক রাজনীতিতে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে নিশ্চিহ্ন করেছে। এটার জন্য আর কারও দরকার হবে না। বিএনপির অপরাজনীতি তাদের ধ্বংসের জন্য দায়ী হবে। অন্য কারও প্রয়োজন নেই। বিএনপির অপকর্মই বিএনপিকে গভীর খাদে ফেলে দিয়েছে।
“তারা মানুষ পুড়িয়ে, আন্দোলনের নামে গাড়ি পুড়িয়ে, বাস পুড়িয়ে, ট্রেন পুড়িয়ে মা ও সন্তানকে মেরে তাদের কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট তারা পাচ্ছে না। এখন তারা এই নির্বাচনের বিষয়ে লাশ বানানোর যে অপরাজনীতি সে পথেও তারা যেতে পারে, এমন ইনফরমেশন আমরা পাচ্ছি।”
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “নির্বাচন হোক। নির্বাচন হওয়ার পরে আমরা দেখব সংলাপ করার কোনো সুযোগ আছে কিনা।”
‘দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ব্যাপারটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। তা না হলে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন দ্রব্যমূলের বিষয়টা কমাতে হবে। এ ব্যাপারেও আমাদের ইশতেহারের ঘোষণা আছে।
“দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। উদ্বেগ থাকার কারণেই দ্রব্যমূল্য কমানোর তাগিদ আছে। সেটা আমরা অনুভব করি। আমরা প্রয়োগিক বাস্তবতায় ও দ্রব্যমূল্য যেন মানুষের জীবনে খুব কঠিন অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে, যতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় সে ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
বৈশ্বিক সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সংকট যারা সৃষ্টি করছে তারা বড় বড় শক্তি। গরিব দেশগুলো আমরা, তার শাস্তি পাচ্ছি। অপরাধটা তাদের, শাস্তি পাচ্ছি আমরা।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, উপ দপ্তর সায়েম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এসময় উপস্থিত ছিলেন।