কারাগারে ফখরুল-আব্বাসকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে, জানাল রাষ্ট্রপক্ষ

বিষয়টি বুধবার আদেশের জন্য রেখেছে হাই কোর্ট বেঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2022, 12:44 PM
Updated : 13 Dec 2022, 12:44 PM

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার বিএনপির এই দুই নেতার স্ত্রীদের করা দুই রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চকে এ কথা জানানো হয়।

তবে ডিভিশন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবীরা। যে কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর দুটি রিটে বুধবার আদেশের জন্য রেখেছেন বিচারক।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে মঙ্গলবার সকালে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন মির্জা ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।

এরপর বেলা সাড়ে ৩টায় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চের রিট দুটির শুনানি হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার শুনানিতে আদালতকে বলেন, “কারাগারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে আজ (মঙ্গলবার) থেকে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।”

এরপর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ডিভিশন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আবেদন করেন। তখন আদালত বুধবার বিষয়টি আদেশের জন্য রাখে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস ফৌজদারী মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারগারে আছেন। এ মামলায় মহানগর হাকিম আদালত তাদের ডিভিশন সুবিধা দিতে গত ৯ ডিসেম্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

“রিটকারীদের অভিযোগ আদালতের আদেশটি কারা কর্তৃপক্ষ মানছেন না। কিন্তু বিচার শাখা থেকে যে আদেশটি রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এসেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে আজ থেকে তাদের প্রথম শ্রেণির ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

“যে কারণে আদালতে আমাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু রিটের দাবি কার্যকর হয়ে গেছে, রিটের কার্যকারিতা আর থাকে না। রিট দুটি যেন আবেদনকারীরা তুলে নেন। কিন্তু রিটকারীপক্ষ নিশ্চিত হতে চান যে, তাদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আদালত বুধবার বেলা ১২টায় রিট দুটি আদেশের জন্য রেখেছেন।”

নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় কারাগারে আছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

গত ৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার হাকিম আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। আইনজীবীদের আবেদনে সেদিন কারাবিধি অনুযায়ী আসামিদের ডিভিশন দেওয়ারও আদেশ দেয় আদালত।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের আগের দিন ৮ ডিসেম্বর বিএনপির ৪৫১ নেতাকর্মীকে তিন মামলায় কারাগারে পাঠায় হাকিম আদালত।এছাড়া ২৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়।

তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর। গ্রেপ্তারদের মধ্যে জামিন পান কেবল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল।

পল্টন থানার মামলায় যাদের কারাগারে পাঠানো হয়, তাদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস ছালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবীর খোকন, চেয়ারপারসেন বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও ছিলেন।

প্রথম দফা জামিন নাকচ হওয়ার পর রোববার ২২৪ বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন চেয়ে আবারও আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। সোমবার শুনানি শেষে তাও নাকচ করে দেন ঢাকার মহানগর হাকিম শফিউদ্দিন।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।

এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে, দায়ের করা হয় মোট চারটি মামলা।

অনেক টানাপড়েন শেষে পুলিশের অনুমতি পেয়ে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশ করে যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ মাঠে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় সেই সমাবেশ। নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি ও বিক্ষোভের নতুন কর্মসূচি দিয়ে বাড়ি ফিরে যান বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

মঙ্গলবার সকালে রিট করার কারণ ব্যাখ্যা করে রাহাত আরা বেগম ও আফরোজা আব্বাসের আইনজীবী কায়সার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য হিসেবে তারা কারাগারে প্রথম শ্রেণি বা যেটাকে ডিভিশন বলা হয়, সেটা পাওয়ার আইনগত অধিকার রাখেন। তাদের যেদিন গ্রেপ্তার করে কারাগারে তোলা হয়, সেদিন তাদের আইনজীবীরা আবেদন করেছিলেন তাদের যেন ডিভিশন দেওয়া হয়।

“বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাদের ডিভিশন দেওয়ার জন্য। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেই আদেশ অমান্য করে তাদের এখনও ডিভিশন দেননি। তাতে তাদের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার খর্ব হয়েছে বলে তারা মনে করেন। সেজন্য তাদের স্ত্রীরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন রিট পিটিশনের মাধ্যমে যাতে আদালত তাদের ডিভিশনের ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেন।“

পুরোনো খবর

Also Read: কারাগারে ফখরুল-আব্বাসের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

Also Read: কারাগারে ফখরুল-আব্বাসদের ‘ডিভিশনের’ জন্য হাই কোর্টে যাবেন আইনজীবীরা

Also Read: নয়া পল্টনে সংঘর্ষ: উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার ফখরুল ও আব্বাস

Also Read: রিমান্ড শেষে বিএনপির ২৩ নেতাকর্মী কারাগারে