“আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে, কঠিন বিচার চাই, তারা যাতে বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট কী জিনিস।”
Published : 10 Dec 2023, 05:12 PM
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন পিটিয়ে হত্যার শিকার পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের ছোট মেয়েটি টাকা জমাচ্ছে। তার শিশু মন ভেবেছে, টাকা দিয়ে তার ‘বাবাকে কিনে আনা যাবে’।
রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ‘মায়ের কান্না’ও ‘অগ্নি-সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ নামে দুটি সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনায় শিশু তানহার এই আকুতি উপস্থিত শ্রোতাদের ছুঁয়ে যায়।
‘মায়ের কান্না’ নামে সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় সেনাবাহিনীতে ‘হত্যার শিকার’ হওয়া ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলনে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন অপর সংগঠনটি।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের এ আয়োজনে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বাসে আগুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারও দাবি করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ট্রাইব্যুনালে সশস্ত্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের বিচার, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, এবং ২০১৩ থেকে ১৫ সালের ‘অগ্নি সন্ত্রাসের’ উপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মেয়ে তানহা বলে, “আমি টাকা জমা করছি, আল্লাহর কাছ থেকে আমার বাবাকে কিনে আনব।”
বড় হয়ে বাবার মতো পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্নের কথাও জানায় শিশুটি।
পারভেজের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, “আমিরুলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার মুখটাও দেখতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, হত্যাকারীদের যেন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়।”
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে গাইবান্ধায় নিহত হাজিদুল ইলাম জাহিদের বাবা আবুল হোসেন বলেন, “জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আমার ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে, পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে। আমার ছেলের ‘অপরাধ’ সে আওয়ামী লীগ করত। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদন জানাই, এদের বিচার যেন নিশ্চিত করা হয়।”
বিএনপি চলমান আন্দোলনে বাসে আগুনে নিহত আবু নাঈমের মা বলেন, “আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে, কঠিন বিচার চাই, তারা যাতে বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট কী জিনিস।”
‘মায়ের কান্না’র সভাপতি কামরুজ্জামান লেলিন বলেন, “বাবার কবর কোথায় সেটা অনেক খুঁজেছি। আজিমপুর কবরস্থানে খুঁজতে গিয়ে জানতে পেরেছি, লাশ ভেবে যাদের নিয়ে আসা হত, যাদের অনেকের গোঙানোর শব্দও শোনা যেত। ওইভাবেই তাদেরকে কবর দেওয়ার নির্দেশ ছিল। এই ‘খুনি’ জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি আমি।”
সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল আমিল চৌধুরী মেয়ে নুজহাত চৌধুরীও সেখানে বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ সদস্য নিহত
কনস্টেবল পারভেজের পরিবারে শোক, মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা-মা