“তার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা আগে থেকে অসুস্থ। মায়ের শরীরও ভাল না। ছেলে নিহতের খবরে বাবা-মা মূর্ছা যাচ্ছেন।”
Published : 28 Oct 2023, 09:20 PM
রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজের পরিবারে চলছে শোকের মাতম; এমন মৃত্যুতে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
শনিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে জখম হন পারভেজ।
নিহত আমিরুল হক পারভেজ (৩২) মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়নের চরকাটারি গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার মোল্লার ছেলে।
চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইয়ূব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমিরুল হক পারভেজের বাবার বাড়ি চরকাটারি গ্রামে ছিল। যমুনায় বাড়ি বিলীন হয়ে গেলে তার বাবা-মা পাশের টাঙ্গাইলে নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার ছোট ভাইও থাকেন।”
পারভেজ তার স্ত্রী রুমা ও পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে তানহা ইসলামকে নিয়ে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের রেলওয়ে কলোনিতে থাকতেন বলে জানান তিনি।
পারভেজের খালাতো ভাই আব্দুল মোমিন বলেন, “পারভেজ ভাইয়েরা তিন ভাই-বোন। বোন সবার বড়। এরপর পারভেজ ভাই। আর তার ছোট ভাই আছেন, যিনি প্রতিবন্ধী।
“তার বাবা আগে থেকে অসুস্থ। মায়ের শরীরের অবস্থাও ভালো না। ছেলে নিহতের খবরে বাবা-মা মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে।”
পারভেজ পড়াশোনা করেছেন দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পুলিশ হত্যায় ছাত্রদল নেতা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কাকরাইলে সংঘর্ষে আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীরাও
বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ সদস্য নিহত
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, “খুবই ভদ্র ছেলে পারভেজ। ২০০৬ সালে আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে সে। তার বাবা অসুস্থ। ভাই প্রতিবন্ধী, পরিবারের এখন কী হবে!”
পারভেজের বন্ধু আরিফ হোসেন বলেন, “আমি আর পারভেজ ২০০৬ সালে চরকাটারি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। পরে সে পুলিশে চাকরি পেয়ে ঢাকা চলে যায়।
“আজ ও না ফেরার দেশে চলে গেল। ওর মেয়ের কী হবে! পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।”
এরই মধ্যে ফেইসবুকে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পড়ে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে চার দিক দিয়ে ঘিরে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। আর তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন।
অন্য একটি ভিডিওতে দুই জন পুলিশ সদস্যকে একে একে একইভাবে পেটানো হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত পুলিশ সদস্য ও আহত পুলিশদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে ছবি রয়েছে এক ছাত্রদলের নেতা নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়েছে; শুধু পেটান নাই, তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার মাথাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। এ দৃশ্য সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।”
“বৃষ্টির মতো তারা ইট পাটকেল ছুড়েছে। তাদের একটা ঘোষণা, পরিকল্পনা ছিল যেটা আমরা শুনতে পেয়েছিলাম তারা একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ২০১৪ সালে যেমন করেছিল ঠিক তেমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে৷”
‘রোববার টাঙ্গাইলে যাবে আমিরুলের মরদেহ’
ভাগনের মৃত্যুর খবর পেয়ে নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে আমিরুলদের বাড়ি যান তার মামা আব্দুল মান্নান মাস্টার।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলছিলেন, “আমিরুলের এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই থাকেন। খবর পাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।”
আমিরুল ২০০৯ সালে পুলিশে যোগ দেন। ২০১২ সালে তিনি বিয়ে করেন।
আব্দুল মান্নান মাস্টার বলেন, “পরিবারের সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কোথায় দাফন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, “আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করি। পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের এমন মৃত্যু অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং মর্মান্তিক।
“রোববার ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকায় আমিরুলের জানাজা হবে। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। পরিবার যেভাবে চাইবে সেভাবে তার জানাজা ও দাফন হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “আমরা তার পরিবারের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।”
দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, “নিহত আমিরুলের পরিবার ফয়েজপুরে বসবাস করলেও এখনও তারা দৌলতপুর এলাকার ভোটার।”