এক ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলাপচারিতায় তার এক মন্তব্য ঘিরে যে ঝড় উঠেছিল, আপাতদৃষ্টিতে তা থিতিয়ে এসেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
Published : 24 Oct 2024, 03:19 AM
তাহলে কি রাষ্ট্রপতি টিকে যাচ্ছেন? অন্তত কিছু সময়ের জন্য?
এক ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলাপচারিতায় তার এক মন্তব্য ঘিরে যে ঝড় উঠেছিল, আপাতদৃষ্টিতে তা থিতিয়ে এসেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
একাধিক সূত্র বলেছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এটা বুঝিয়েছেন যে, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে তার ওই আলাপচারিতা ছিল ‘নিছকই অনানুষ্ঠানিক’ বিষয়, আর তার কথাও ‘ঠিকঠাক’ প্রকাশিত হয়নি, তার মন্তব্য ‘অন্যভাবে’ দেখানো হয়েছে।
তার পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের বাইরে দিনভর বিক্ষোভের পর সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। সেখানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নামও ভাসছিল।
একাধিক সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রেখে বিচার বিভাগ ছাড়ার আগ্রহ প্রধান বিচারপতির নেই।
তাদের একজন বলেছেন, “বিচার বিভাগের সংস্কার আর অন্যান্য যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন, সেসব নিয়েই তিনি বেশি মনোযোগী।”
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টার বৈঠকের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিচারপতি আহমেদই হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা।
প্রধান বিচারপতির ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ওই প্রসঙ্গ আসলে আলোচনাতেই ছিল না।
বিচার অঙ্গনের শীর্ষ পদে মাত্র কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওই সূত্রদের মধ্যে একজনকে বলেছেন, “ওটা নিছকই জল্পনা।”
অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের আলোচনা বুধবার হঠাৎ করেই অন্য দিকে মোড় নেয়, যখন তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়’। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে বঙ্গভবনের বাইরে যারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছিল, তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে মতভিন্নতা তৈরি হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক যখন দুই দিন সময় চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করছিলেন, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের এক নেতা ছিলেন অনড়।
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বুধবার এ বিষয়ে কথা বলার আগেই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই দুই নেতাই বলেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে কোনো জটিলতা তৈরি হোক, তারা তা চান না।
সকালে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান তার দলের স্থায়ী কমিটির অন্য দুই সদস্যকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করব।"
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পরে গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই হোক শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।
“রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয়, বাধাগ্রস্ত হয় বা কণ্টকাকীর্ণ হয়, তা জাতির কাম্য নয়।”
বিএনপি যে কারণেই এমন অবস্থান নিক না কেন, দলটির নেতাদের এমন বক্তব্য আর ছাত্রদের অন্তত দুজন সমন্বয়ক ও উপদেষ্টা নাহিদের বিবৃতি অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও বঙ্গভবনের বাইরের আন্দোলনকারীদের থমকে দিয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিনের ওপর এই চাপের সূচনা হয়েছিল তার এক কথিত বক্তব্য এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্যের পর।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর দেন। সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর।
সেখানে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে মানবজমিন সম্পাদক লেখেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।”
এর প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদেরকে বলেন, রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্য ‘মিথ্যাচার’ এবং এর মধ্য দিয়ে তার ‘শপথ লংঘন’ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি এখন আর পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা, সেই প্রশ্ন উপদেষ্টা তোলেন।
কিন্তু সংসদ না থাকায় তাকে অপসারণের সাংবিধানিক উপায় যেহেতু নেই, সেহেতু সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মাঠের আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে।
পুরনো খবর
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি: বঙ্গভবনের সামনে গভীর রাতেও বিক্ষোভ
'মীমাংসিত' বিষয়ে বিতর্ক তৈরি না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি নিয়ে আসিফ নজরুলের বক্তব্যে 'অন্তর্বর্তী সরকার একমত'