হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম বিক্ষোভকারীদেরকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও মানতে নারাজ গণঅধিকার পরিষদের তারেক রহমান।
Published : 23 Oct 2024, 01:05 AM
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান বজায় রাখা নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে দুই দিন সময় চেয়ে তাদেরকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি পক্ষ সেই এলাকা ত্যাগ করলেও আরেকটি পক্ষ রাতের মধ্যেই পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে।
সে সময় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা।
এর আগে রাত ১০টার পর আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদও আন্দোলনকারীদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে তিনি নিজেও পরে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আড়াই মাস পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন কি-না, এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়।
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি পদত্যাগপত্রটি খুঁজে পাননি।
এই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে এই দাবিতে একটি পক্ষ বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে আরেকটি পক্ষ সাতদিন সময় দেয়।
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত ৩
সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনের সামনের অবস্থানকে ঘিরে হাঙ্গামা তৈরি হয়। ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকতে চায় আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে নিবৃত্ত করে।
এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ, তারা আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছুড়ে।
এই ঘটনায় তিন জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
তারা হলেন, শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ খান এবং ফুটপাতের দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “আঘাত গুরুতর নয়।”
আহতদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মেহেদী হাসান বলেন, “তারা বঙ্গভবনে ঢুকতে গেলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেয় ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় তারা আহত হন।”
পরে পুলিশের ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। তারা পুলিশের একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়ে। গাড়িতে উঠে পুলিশকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়।
রাত পৌনে দশটার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে একদল বিক্ষোভকারী বঙ্গভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের আবার সংঘাত হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি করলে পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে সরে যায়।
সে সময় সেনাবাহিনীর একটি দলকে বেশ কিছু সাঁজোয়া যানসহ পাহারায় থাকতে দেখা যায়।
সারজিসের আহ্বান
এক পর্যায়ে সেখানে যান হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
বঙ্গভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর মাইক নিয়ে সারজিস বলেন, তারা এই সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতি দুই দিন সময় নিচ্ছেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে তারা জনতা নেতৃত্বে আন্দোলনে নামবেন।
তার পর বক্তব্য দেন হাসনাত। এ সময় 'আজকেই পদত্যাগ' দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা।
‘আজকেই পদত্যাগ চাই’
তারেক রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এসেছিলেন এখান থেকে সবাইকে সরিয়ে নিতে। আমরা বলেছি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে চুপ্পু না গেলে আমরাও যাব না।
“তারা আমাদের বলেছে ভেতরে গিয়ে মিটিং করতে হবে। তবে আমরা মিটিংয়ে যাইনি।”
"মিটিং করতে গিয়া মুরগি হব নাকি?’ এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “মিটিং থেকে বেরোনোর পর লোকেরা আমারে আস্ত রাখবে?
“চুপ্পুর বাসভবনের সামনে আমরা মার খেয়েছি, আমরা এখানে বিএনপি আছি, জামায়াত আছি, ব্যবসায়ীরা আছে, সাধারণ ছাত্ররা আছে। চুপ্পু না গেলে আমরা যাব না।”
আড়াই মাস পর হঠাৎ বিতর্ক
গত ৫ অগাস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।
সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।
এর তিনদিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছেই।
এর আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে, যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণ করা যায় বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অবশ্য সংসদ বহাল না থাকায় রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানসম্মত উপায়ে সরানোর উপায় আছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।