গুলশানের বাসা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
Published : 22 Aug 2024, 07:28 PM
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বাসা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে রাতে তাকে নিউ মার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ওবায়দুর রহমান রাজনীতিবিদ মেননকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি জানাননি তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননকে গ্রেপ্তারের খবর এল।
রাতে পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর বলেন, "নিউ মার্কেট থানায় বুধবার দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।"
গুলশান থেকে গ্রেপ্তারের পর মেননকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাকে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।
ডিএমপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে নিউ মার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই নিউ মার্কেট এলাকায় গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ (৪৫) নিহতের ঘটনায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্বজন আব্দুর রহমান।
তবে এ মামলাতেই মেননকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না নিউমার্কেট থানা ও ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি।
পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়ার আগে বিকালে মেননের বাসার নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল মোমিন বলেন, গুলশানের বাসা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
“গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন এসে তাকে নিয়ে গেছেন।”
বৃহস্পতিবারই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্যের’ অভিযোগে মামলা করার পর তাকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার খবর আসে।
মো. জিয়াউল হক নামে এক আইনজীবী ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুল ইসলামের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আসামি করা হয়।
এর আগে সিলেটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আহত এক ছাত্রদল নেতা। তাকে আসামি করা হয় মেননকেও।
ওই মামলায় এ দুজন ছাড়াও শেখ রেহানা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও হাসানুল হক ইনুসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জুবের আহমদ আদালতে মামলার আবেদন করেন।
পরে তার আইনজীবী মো. আব্দুল গফফার বলেন, আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়া আবেদনটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার বলা হয়, গত ৪ অগাস্ট সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলি ও হামলা চালান। এতে অনেকের সঙ্গে বাদী নিজেও আহত হয়েছেন।
তাছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে এক শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা পড়েছে।
তাদের পাশাপাশি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অভিযোগে মোট ২৭ জনের নাম রয়েছে। পাশাপাশি হত্যায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা তদন্তেরও আবেদন করা হয়।
নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর পরিবারের পক্ষে আইনজীবী আসাদ উদ্দিন সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এ অভিযোগ জমা দেন।
এদিকে দলের সভাপতি গ্রেপ্তারের পর প্রবীণ এ রাজনীতিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইনি কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
সন্ধায় ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য মাহমুদুল হাসান মানিক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, “এদেশের মুক্তি সংগ্রাম, আয়ুব স্বৈরশাহীর বিরুদ্ধে লড়াই, সামরিক শাসন বিরোধী লড়াইসহ মাওলানা ভাসানীর একনিষ্ট সহচর প্রগতিবাদী, সাম্যবাদী লড়াইয়ের অগ্রগামী সৈনিককে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে যেন পরিণত করা না হয়।”
সকল আইনি অধিকারের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “৮২ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ, সংগ্রামী নেতার সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গোয়েন্দা বিভাগ তাদের আইনী কাজ পরিচালনা করবেন।
“আসামির সকল আইনি অধিকার, মানবাধিকার যেন সুরক্ষা দেওয়া হয়। বায়োবৃদ্ধ মানুষের স্বাস্থ্য চেকআপসহ অনতিবিলম্বে জামিন দেওয়া হয়।”
ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বিবৃতিতে মাহমুদুল হাসান মানিক বলেন, “সারাদেশে কর্মীবাহিনী শান্ত থেকে তার মুক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
আরও পড়ুন
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেক অভিযোগ, সঙ্গে ইনু মেনন মঞ্জু