কাঠগড়া থেকে আমু বলেন, “আমরা যার যার পক্ষ অবলম্বন করব। নিজেরা নিজেরা কেন দ্বন্দ্বে জড়াব?”
Published : 07 Nov 2024, 03:19 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজা বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আমুকে এদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিপ। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি শুরু করে আমুর আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরী বলেন, পাবলিক প্রসিকিউটরের বক্তব্যটি ‘রাজনৈতিক’।
তাতে উত্তেজিত হয়ে আদালতে উপস্থিত অন্য আইনজীবীরা তাকে মারধর শুরু করেন। পিটুনির মধ্যে তিনি আদালতের দরজার সামনে পড়ে যান। একপর্যায়ে তাকে লাথি মারা হয়।
এরপর কয়েকজন আইনজীবী তাকে তুলে আদালত থেকে বের করে দেন। পরে সাংবাদিকদের সামনে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন স্বপন রায় চৌধুরী।
আইনজীবীদের হট্টগোলের পর আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে আমীর হোসেন আমু বলেন, "আমি ঢাকা বারের সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য। এই পরিবেশ দেখে আমি দুঃখিত। আইনজীবীরা ভাই ভাই, মিলেমিশে থাকা উচিত। এখনকার পরিবেশ কিন্তু সবসময় থাকবে না।"
এসময় ফের উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পরে আমু বলেন, “আমরা যার যার পক্ষ অবলম্বন করব। নিজেরা নিজেরা কেন দ্বন্দ্বে জড়াব?”
এরপর ওমর ফারুক বলেন, “যখন আপনি ক্ষমতায় ছিলেন, তখন কি খবর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারের? আইনজীবীরা তো ভালোই ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় সিল মেরে ভোট নিয়ে গেছে, আইনজীবীদের মারধর করেছে। তখন কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?”
পরে আমু বলেন, “প্রথমবার যখন গোলমাল হয়, আমি এর বিরোধিতা করি। ভোট দিতে আসিনি, বয়কট করেছি।”
পরে আদালত তাকে ৬ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এ ঘটনার আগে শুনানিতে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “আমু শেখ হাসিনার বাপকে বিপথে নিয়ে গেছেন। একইভাবে শেখ হাসিনাকে বিপথে নিয়ে গেছেন। (বুঝিয়েছেন) ‘কোনো রাজনৈতিক দলের দরকার নেই, আপনি ক্ষমতায় থাকবেন’। এর ফলে হাজার হাজার ছাত্র জনতা জীবন দিয়েছে।
“১৪ দল, যারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছেন, তাদের সমন্বয়ক ছিলেন আমু। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। সরাসরি ১৪ দলের বৈঠক থেকে ছাত্রদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। তার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও সরাসরি মদদে ব্যবসায়ী ওয়াদুদকে হত্যা করা হয়েছে।”
এ মামলার বিবরণে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউ মার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মারা যান।
ওই ঘটনায় তার শ্যালক আব্দুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।