বরিশালের সমাবেশে নেতাকর্মীদের সামনে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “দফা এক, দাবি এক। সেটা কী?” নেতাকর্মীরা সমস্বরে বলেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগ।”
Published : 24 Jun 2023, 09:41 PM
বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখালেখির মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনসভা থেকেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার ‘বৈধ নয়’ দাবি করে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, “এদেরকে সরাতে হবে? এদেরকে সরাতে হলে আমাদের কী করতে হবে? দফা এক, দাবি এক। সেটা কী?
নেতাকর্মীরা তখন সমস্বরে বলেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগ।”
শনিবার বিকালে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ এসব কথা বলেন তিনি।
বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ দাবি করে ফখরুল এ সরকারকে ‘মানেন না’ বলে সমাবেশে জানান। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই এবং সেই নির্বাচন চাই সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, এই শেখ হাসিনার অধীনে নয়।
“সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, নতুন পার্লামেন্ট গঠন করে জনগণের স্বপ্নকে পূরণ করতে হবে।”
এসময় সুষ্ঠু নির্বাচনের এ দাবিতে সরকারকে সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন এই বিএনপি নেতা।
সমাবেশে বরিশাল ছাড়াও ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর জেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী মাথায় লাল, সবুজ, হলুদ টুপি পরে অংশ নেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা ছাড়াও ছিল নানা ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন।
তরুণদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সফলতা আসবে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, “এদেরকে পরাজিত করতে হবে। জনগণকে বিজয়ী করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে একটা মুক্ত স্বাধীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। আমাদের সকল মানুষকে তারেক রহমানের স্বপ্ন দেখাতে হবে।”
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করীমকে ঘুষির বিষয়টিও উঠে আসে বিএনপি নেতার বক্তব্যে।
তিনি বলেন, “আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্বেয় মানুষ। জনগণের পীর সাহেবকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করে নাই। আমরা ঘৃণা জানিয়েছি।“
দেশের দুটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সবাইকে বন্ধ করে রেখে নিজেরা সিল-ছাপ্পড় মেরে আগের রাত্রে ভোট করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট করে; তারপরে বলে যে, ভোট হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি।
“এটা করে কেন? তারা জানে যে, সত্যিকার অর্থে যদি জনগণ ভোট দিতে পারে তাদের (জনগণ) ইচ্ছাটাকে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ১০টা আসনও পাবে না। তাড়াতাড়ি গুটিয়ে সবাইকে পালাতে হবে।”
সুইস ব্যাংক প্রসঙ্গ
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আমাদের ‘অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ যখন সুইজারল্যান্ড গেলেন তারপরেই পত্রিকায় দেখছি যে, সুইস ব্যাংক থেকে নাকি বাংলাদেশের টাকা উধাও হয়ে গেছে।
“আমি জানি না এটার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে কি না, যোগসূত্র আছে কি না। কিন্তু সেখান থেকে নাকি আবার উধাও হয়ে গেছে।”
‘চুরি এদের একমাত্র লক্ষ্য’
ফখরুলের অভিযোগ, “আজকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ জানে যে, এরা হচ্ছে চোর। শুধু ভোট চোর না। আমাদের পকেটও কাটে, পকেট মারও। এই যে বিদ্যুতের বিল দেন, আপনারা কি জানেন বিদ্যুতের বিল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা নাই? কোথায় যায়? ওদের কাছে যায়।
“এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি করা, ডাকাতি করা। আর চুরি-ডাকাতি করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা এবং সেখানে টাকা রেখে দেয়া।”
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে এবং যু্ব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জাকির হোসেন নান্নু, এইচ এম তাসলিম উদ্দিন, মাসুদ হাসান মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, রফিকুল ইসলাম রফিক, মশিউর রহমান মনজু, রফিকুল ইসলাম জনি, ছাত্রদলের তানভীর হাসান, হুমায়ুন কবির, মাহফুজুর রহমান মিঠু, রেজাউল করীম রনি বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সরকারি চাকুরিচ্যুত আবুল কালাম আজাদ রিপন, চাকরি না পাওয়া জাহিদুল ইসলাম, তরুণ ভোটার জান্নাতুল উর্মি, ভোলায় ‘পুলিশের গুলিতে’ নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় নির্যাতিত স্থানীয় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী, নিখোঁজ কালু মিয়া ও মিরাজ আহমেদের মা ফিরোজা বেগম বক্তব্য দেন।