“নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে জুলাই সনদের একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে,” বলেন তিনি।
Published : 08 Apr 2025, 06:11 PM
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও জনমতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদ প্রকাশ করতে যাচ্ছে, তার আলোকেই আগামী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা বলছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে মঙ্গলবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “স্বাধীনতা উত্তর এই প্রথমবারের মত আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণের একটা পথ-পদ্ধতি তৈরি করেছি। এটা সম্ভব হয়েছে এ দেশের গণমানুষের সংগ্রামের কারণে ও রাজনৈতিক দলের জন্য, যার অন্যতম অংশীদার নাগরিক ঐক্য।
“আমরা আশা করছি এই প্রক্রিয়াটা (আলোচনার) অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে আমরা একটা জায়গায় দাঁড়াতে পারব, যেখানে আমরা একটা জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ জুলাই ১৪ তারিখ পর্যন্ত, আমরা এর মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে চাই। এর একটি অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই সনদ, যাতে আগামীর বাংলাদেশের একটি পথরেখা তৈরি হয়। এরই একটি অংশ হিসেবে নির্বাচন হবে।”
আলী রীয়াজ বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে জুলাই সনদের একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে। জাতীয় সনদের একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে, এটা আমরা আশা করি। আমরা পথ খুঁজছি যাতে করে আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথ আমরা সুনির্দিষ্ট করতে পারি। একত্রে অগ্রসর হতে পারি, ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হতে পারি।”
মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর নাগরিক ঐক্যর সঙ্গে বৈঠকে বসে ঐকমত্য কমিশন। নাগরিক ঐক্যর প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর চৌধুরী দীপু নেতৃত্বে ১০ সদস্যদের প্রতিনিধিদল সেখানে অংশ নেয়।
আলোচনায় জিল্লুর চৌধুরী দীপু বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার আর গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, এগুলো শুধু মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। চুয়ান্ন বছর পার হওয়ার পরে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সে উদ্যোগটা নিয়েছেন, এই উদ্যোগটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
“আমরা বিশ্বাস করি এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র, মানুষের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার, সুশাসনের অধিকার অর্থাৎ শতভাগ গণতন্ত্র মানুষ অর্জন করতে পারবে।”
ছক আকারে ঐকমত্য কমিশনের মতামত চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের দেওয়া স্প্রেড শিটে আমরা ১৬৬টার মধ্যে ১১৪টাতে (সুপারিশ) একমত হয়েছি, ১১টিতে আংশিক একমত হয়েছি। বাকিগুলোতে একমত হতে পারিনি। আশা করি আলোচনায় আপনাদের ব্যাখ্যা জানতে পারব।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য ধরে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে নয়টি দল এখনো তাদের মতামত দেয়নি।
দলগুলোর মতামতের পর তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে গত ১৮ মার্চ বসে কমিশন।
রোজার ঈদের আগে চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়। ঈদের পর সোমবার আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। আর মঙ্গলবার বসেছে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। সব মিলিয়ে ছয়টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন।