সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও অভিযোগ বিএনপির।
Published : 12 Mar 2023, 07:49 PM
পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের ‘যোগসাজশ’ পাওয়ার দাবি করেছে ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত বিএনপির কমিটি।
কমিটির প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। আমরা গত ৮ তারিখে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, ভিকটিমদের বাড়িতে গিয়েছি, কথা বলেছি।
“সবচাইতে দুঃখজনক যে, হামলায় বা হত্যাকাণ্ডে যারা অংশগ্রহণ করে, লুটতরাজ করে, তাদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই এবং লুকিয়ে থাকার কোনেো উদ্যোগ তাদের মধ্যে নেই। তারা মহাসমারোহে মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যাদের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের সম্মুখীন হয়। এটি হল সেখানের বাস্তবতা।”
রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি একথা বলেন। তার পাশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আমরা কয়েকজন ভিকটিমের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে যে, এটি পরিকল্পিত এবং যারা করেছে তাদের নাম-ধামও আমাদেরকে বলেছে। মোতাহার, আবদুর রহমান- ব্যক্তিদের নাম বলেছে তারা। যে মামলা করা হয়েছে সেই মামলায় তাদের নাম নাই।
“রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাহেব যখন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তখন ভিকটিমরাই তাকে (মন্ত্রীকে) বলেছে, যারা আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়েছে, তারা তো আপনার সাথেই আছে।”
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তরফে তিন দিনের সালানা জলসা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিরোধিতা শুরু করে স্থানীয় একটি পক্ষ। তারা ওই অনুষ্ঠানের আগের দিন ২ মার্চ থেকে জলসা বন্ধ এবং আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে পঞ্চগড় শহরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে।
জলসার দিন ৩ মার্চ জুমার নামাজের পর ওই পক্ষটি শহরে বড় মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়, চলে ধাওয়া-ধাওয়ি। তখন ট্রাফিক পুলিশ বক্স, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়; আর বিকালে সদর ও বোদা উপজেলায় আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এই সংঘাতে দুজনের প্রাণহানির পাশাপাশি অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিএনপি নেতা হাফিজ বলেন, “আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সকল মানুষ একটি জায়গায় রয়েছে, তাদেরকে পাহারা দিচ্ছে দলীয় ব্যক্তিবর্গ। সেখানে বিজিবি, পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করেছি।
“কিন্তু যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার, সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, গাফিলতি আমরা ভিকটিমদের কাছ থেকে শুনেছি।”
আহমদিয়াদের বাড়িতে আগুন-হামলা ‘কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই’
রেলমন্ত্রীকে পেয়ে আহমদিয়াদের ‘ক্ষোভ’, শাস্তির আশ্বাস
পঞ্চগড়ের সহিংসতা তদন্তে বিএনপির কমিটি
সাবেক মন্ত্রী হাফিজের ভাষ্য, “তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করেছেন প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে। ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত ব্যক্তিদের আত্মচিৎকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বোধোদয় হয়নি।
“ডিসি-এসপি ৩ ঘণ্টা পরে আসার পর- তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক… এজন্য আমরা মনে করি, এটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। দেশে এখন যে ব্যবস্থা চলছে, এর নাম মাস্তানতন্ত্র। ক্ষমতাসীনরাই এটা করছে।”
তদন্তকালে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পাননি অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি তথা ডিসি-এসপির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। তারা দুপুর আড়াইটায় সময় দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা যাবার পর- সেটি তারা ক্যানসেল করে দেয়।
“এতে খুব অকিঞ্চিৎকর মনে হয় নিজেদেরকে। আমরা যারা গিয়েছিলাম, আর কিছু না হোক আমরা সিনিয়র সিটিজেন, যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমাদের… আমাদের সাথে দেখা করতে তারা যে অপরাগতা জানায়- এতেই তাদের মন-মানসিকতা বোঝা যায়।”
পঞ্চগড়ে সহিংসতার ঘটনায় এক ডজনের বেশি মামলা হয়েছে, যাতে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও আসামি।
হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, “যারা অপরাধ ঘটিয়েছে, তাদেরকে ধরা হয় না; ধরা হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের। বেশ কয়েকজন নিরীহ ঘটনাস্থল থেকে দূরে অবস্থানকারী বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
পঞ্চগড়ে সংঘাতের পর ৬ মার্চ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতেই রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসে ওই কমিটি।
উদ্দেশ্য বিএনপি নিয়ে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি: ফখরুল
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “পঞ্চগড়ের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমরা মনে করি, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন চলছে- সেই আন্দোলনকে ডাইভারশন করা, জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং দেশে-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য ছিল।
“সরকার এভাবেই এই সময়টাকে বেছে নিয়ে আমরা যেটা বলেছি যে, তাদের লোকজনকে দিয়ে তারা (ক্ষমতাসীনরা) এটা করেছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখন যেটা পুলিশ সেখানে করেছে- যেটা মারাত্মকভাবে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যে ১৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তারা বলেছে যে, ১২ হাজার না ১৬ হাজার লোক এটার মধ্যে আসামি আছে। ১০০০ লোককে বাই নেইম গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।
“রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে একটা অসৎ উদ্দেশ্যে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তারা এই কাজটা করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদও উপস্থিত ছিলেন।