আনিসুল হক বলেন, “বিএনপি-জামায়াত প্রতিবার নির্বাচন নষ্ট করার চেষ্টা করেছে।”
Published : 26 Oct 2023, 02:12 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার নিজের দপ্তরের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই। এখন কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালেও এটা করেছেন, তার কারণ তিনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এটা করেছেন। এখন তার ওপর নির্ভর করে তিনি কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার দেবেন বা কী করবেন, কী করবেন না।
“আবার সংবিধান অনুযায়ী যদি আমরা বলি, যখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন (তফসিল) ঘোষণা করবে, সেই মুহূর্ত থেকে এই সরকার নির্বাচনকালীন সরকার।”
২০১৪ সালের মত এবারের নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট হবে কিনা, এ প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে একটি নির্বাচন করার চেষ্টা করছিলেন।
“সেই সময়ের ইতিহাস আপনারা জানেন। বিরোধী দলীয় নেতাকে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা ধরেননি। সে ক্ষেত্রে ২০১৮ সালেও তিনি আলোচনা করেছেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নির্বাচনে গেছেন। কিন্তু প্রতিবারই বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নষ্ট করার সব পদক্ষেপ নিয়েছে।”
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “যারা এটার মধ্যে পার্টিসিপেট (অংশগ্রহণ) করতে চান তাদের স্বাগতম, যারা করবেন না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।
“নির্বাচন কখন হবে, সেই অনুসারে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক এবং নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে।”
নির্বাচনের আগে আলোচনার সুযোগ আছে কিনা, এ প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললে আলোচনার সুযোগ নেই। অন্যকিছু কিছু যদি আলোচনা করতে চায়, আমি তো জানি না যে কি প্রস্তাব, প্রস্তাবের ওপর নির্ভর করবে আলোচনার সুযোগ আছে কিনা।”
ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরুর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেজন্য নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
কিন্তু বিরোধী দলে থাকা বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর কোনো সুযোগ নেই, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই নির্বাচন হবে।
সংবিধানে এখন নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থানে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ওই বছরের ৩০ জুন সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে সংসদ।
তত্ত্বাবধায়কের অধীনে টানা তিনটি নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন হয় দলীয় সরকারের অধীনে।
সেই নির্বাচনের আগে গঠন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেও সেই মন্ত্রিসভার আকার হয় ছোট। ভোটের পর নতুন সরকারের শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত সেই সরকার নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা কেবল রুটিন কাজ করে যায়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা।
সংবিধান সংশোধনের দাবিতে ৩০ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে শুধু আমি একটা কথাই বলতে চাই, রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে।
“তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটি বিষয় আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই, সেটা হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারা ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। এবং এটাকে আবার রিভিজিট করে সংবিধান সংশোধনের কোনো সম্ভাবনা নেই।”