দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন’ গঠন করতে বামপন্থিদের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
Published : 24 Jul 2023, 11:29 PM
ক্ষমতায় থাকতে কিংবা বসতে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই ভারতসহ পরাশক্তিগুলোকে তোষণ করে চলছে বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসতে বিএনপি পরাশক্তিগুলোকে আর কী দিতে পারে, তা নিয়েই দলটি সংকটে পড়েছে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সম্মেলন কক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ আয়োজিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পুঁজির পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য: বামপন্থীদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, সর্বজনকথা পত্রিকার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যত কী হবে? এখন ভারত বাংলাদেশকে খেয়ে ফেলার মতো অবস্থা। বন্দর থেকে শুরু করে সবই পেয়েছে তারা।”
“কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা চিরদিন মনে রাখবে’। শুধু ভারত নয়, যে যেটা চাচ্ছে সরকার তা দিতে প্রস্তুত। বিএনপি এর চেয়ে বেশি কী দেবে, তা খুঁজে পাচ্ছে না। এটা বিএনপির জন্য জটিল সমস্যা।”
ভারতের বামপন্থিদেরও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, পুঁজিবাদের আধিপত্য প্রতিহত করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ‘সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন’ গঠন করতে বামপন্থিদের কাজ করতে হবে।
“দক্ষিণ এশিয়ায় যে পুঁজির আধিপত্যের মধ্যে আমরা আছি, সেখান থেকে বের হতে গেলে পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে আমাদের একটা ভিশন চিন্তা করা উচিৎ। এই ভিশনটা একমাত্র বামপন্থিরাই ধারণ করতে পারে।”
এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমানে কোয়াড ও ব্রিকস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমার কাছে এগুলো আধিপত্যবাধের আরেকটা নতুন রূপ।
“এগুলোতে আপনি দেখবেন না শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশকে মুখ্য ভূমিকায় আনতে। বৈদেশিক শক্তি বা আমাদের অঞ্চলের বাইরের ক্ষমতাশালী দেশগুলো কিন্তু এই অঞ্চলে এসে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এটা বিভিন্ন সময় নাম বদলাচ্ছে।”
প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতায় বামপন্থিদের এক হয়ে কাজ করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “বামপন্থিদের মূল জায়গাটা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভূ-রাজনীতি এখন জটিল অবস্থায় আছে। সেখানে পুজির স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে, নির্দিষ্ট জাতি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বটি মেকি আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, “গত পরশু হেনরি কিসিঞ্জার চীন ভিজিট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের কোনো ঝামেলা নাই। এগুলো হচ্ছে আইওয়াশ।
“এই আইওয়াশ করে ভারতবর্ষের মতো অঞ্চলগুলোকে বোকা বানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন তাদের কাছে টেনে নিতে চাচ্ছে। যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আসলে মায়াজাল। যেটার পেছনে সুবিধাবাদী ও পুঁজিবাদীরা তাদের স্বার্থ কায়েম করছে।”
অনুষ্ঠানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং চীনের নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী পুঁজিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর কল্যাণময় ভূমিকার পরিবর্তে রাষ্ট্রগুলো কোম্পানিসুলভ আচরণ করছে। রাষ্ট্রগুলো একেকটা কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে, পুঁজির প্রভাবে যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার দারুণভাবে নিগৃহীত হচ্ছে।”