এরশাদ আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 14 Jul 2019 09:31 AM BdST Updated: 15 Jul 2019 06:56 PM BdST
-
এইচ এম এরশাদ (১৯৩০-২০১৯)
-
৬ জানুয়ারি হুইল চেয়ারে করে সংসদ ভবনে গিয়ে সাংসদ হিসেবে শপথ নেন এরশাদ
-
হুইল চেয়ারে এইচ এম এরশাদ; এই ছবি গত ২০ জানুয়ারির
-
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার কচুক্ষেতে জনসভায় এইচ এম এরশাদ
-
রাজকীয় চালচলনে অভ্যস্ত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
-
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণভবনে সংলাপ শেষে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
-
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রচার কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠানে এইচ এম এরশাদ। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তিন দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব নিয়ে থাকা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনাবসান ঘটেছে।
গত ১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা রোববার সকাল পৌনে ৮টায় তার মৃত্যুর ঘোষণা দেন।
৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তের ক্যান্সার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন; শেষ দিকে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না।
ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের শনিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না।
“প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি। আসলে তার বয়স হয়েছে। বয়সের কারণে যে উন্নতি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।”
এরশাদ মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী রওশন এরশাদ, তার ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদও (শাদ এরশাদ) ছিলেন সিএমএইচে।
রওশন ভারাক্রান্ত গলায় সাংবাদিকদের বলেন, “প্রিয়জন চলে যায়; সেই শোক বহন করা কষ্টের হয়ে যায়। উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই।”
এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা ভারতের আজমির শরিফ থেকে ফেইসবুকে লিখেছেন, “এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমীর শরীফ আসলাম, আর তুমিও চলে গেলে। আবার দেখা হবে হয়ত অন্য এক দুনিয়াতে, যেখানে থাকবে না কোনো রাজনীতি।”
এরশাদ-বিদিশার ছেলে শাহতা জারাব এরিক (এরিক এরশাদ) বাবার বারিধারার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে হাসপাতালে ছুটে আসেন।

গত রোজায় নিজের বারিধারার বাড়িতে এতিমদের সঙ্গে ইফতার করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ, তার সঙ্গে ছেলে এরিক এরশাদও ছিলেন (ফাইল ছবি)
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এরিক বাবাকে শেষবারের মতো দেখে বেরিয়ে আসার সময় বলেন, “উনার জন্য সারা দেশবাসী দোয়া করেন। উনার মতো মানুষ আর আসবে না কখনও।”
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও স্বজন এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ছিলেন হাসপাতালে।

ছেলে শাদ এরশাদকে নিয়ে স্বামী এইচ এম এরশাদের শয্যাপাশে রওশন এরশাদ। গত ২৮ জুনের এই ছবিটিই অসুস্থ অবস্থায় এরশাদের প্রকাশিত শেষ ছবি
গত কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় ছিলেন এরশাদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের শেষ ভাগে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যায়নি তাকে।
এই সময়ে নিজের সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে যান এরশাদ। অসুস্থতার কারণে ভাই জি এম কাদেরকে উত্তরসূরি ঘোষণা করে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও বসিয়ে যান তিনি।

গত বছরের শেষে অসুস্থতার মধ্যে নেতা-কর্মীদের সামনে এইচ এম এরশাদ
গত ২২ জুন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এরশাদকে সিএমএইচে নেওয়া হলে রাখা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে, সেখান থেকে আর জীবনে ফেরা হয়নি তার।
রোববার দুপুরেই ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদের প্রথম জানাজা হয়।

ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এইচ এম এরশাদের প্রথম জানাজা হয়
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার এক ঘণ্টা আগে জাতীয় পতাকা ও সেনাবাহিনীর পতাকা মোড়ানো এরশাদের কফিন মসজিদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে ভাইয়ের জন্য সবার দোয়া চান জি এম কাদের, কোনো ভুল করে থাকলে তার জন্য ক্ষমাও চান তিনি।
জানাজার পর এরশোদের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএইচের হিমঘরে।

সিএমএইচে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের জানাজা হবে। এরপর বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বিকালে বায়তুল মোকাররমে হবে আরেকটি জানাজা।
বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে মঙ্গলবার সকালে মরদেহ নেওয়া হবে এরশাদের পৈত্রিক নিবাস রংপুরে। সেখানে জেলা ঈদগাহ মাঠে হবে চতুর্থ জানাজা। এরপর ঢাকায় ফিরিয়ে এনে দাফন করা হবে সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ সেনা কবরস্থানে এরশাদের দাফনের কথা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হলেও দলটির রংপুরের নেতারা চাইছেন সেখানে তাদের নেতার সমাধি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রাঙ্গাঁ বলেছেন, দাফনের বিষয়ে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবার বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি হবে বলে জানানো হয়েছে।

রাজকীয় চালচলনে অভ্যস্ত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত এরশাদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আশির দশকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আট বছর দেশ শাসন করে গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের আগের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালনকারী এরশাদ বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন।
এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; শোক বার্তায় তিনি প্রয়াতের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন।
যে তিন জোটের আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন ঘটেছিল, সেই তিন জোটের শীর্ষ তিন নেতার দলই শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এরশাদের ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ স্মরণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ (ফাইল ছবি)
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের পাঠানো শোকবার্তায় এরশাদকে উল্লেখ করা হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাদামাটা এক বার্তায় এরশাদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশের রাজনীতির মেরুকরণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে পতিত সামরিক শাসক এরশাদই এই রকম অবস্থান পেয়ে গিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে এইচ এম এরশাদ (ছবি: সংগৃহীত)
এরশাদকে ‘পুনর্বাসনে’ ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকায় মনোবেদনা প্রকাশ করে শহীদ শামসুল আলম মিলনের মা সেলিনা আখতার বলেছিলেন, “সারাবিশ্বে স্বৈরশাসককে দেশ ছাড়তে হয় নতুবা বিচারের মুখোমুখি করে কঠোর শাস্তি দিতে দেখা যায়। অথচ আমাদের এখানে স্বৈরশাসককে ছুড়ে না ফেলে ক্ষমতাসীন দলে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে।”
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। ৯০ এর গণআন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই ‘বিশ্ব বেহায়া’ চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও আলোচিত ছিলেন তিনি।
তবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা ‘পল্লীবন্ধু’ হিসেবেই ডাকতেন তাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ অধ্যায়ের অবসান এরশাদের সন্তান-সন্ততিরা কে কোথায় |
এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারের দিনহাটায়। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে; পেয়ারা ডাকনামে পরিচিত এরশাদের কলেজের পড়াশোনা চলে রংপুরেই।

এইচ এম এরশাদ যখন সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন (সংগৃহীত ছবি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন এরশাদ। তার ভাষ্য, তিনি বন্দি হিসেবে সেখানে ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে অনেকে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
পাকিস্তান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর মামা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়ার (বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী) সুপারিশে এরশাদকে সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফেরত নেওয়া হয় বলে সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম তার বইয়ে লিখেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হন তিনি; তখন তার পদমর্যাদা ছিল কর্নেল।
১৯৭৫ সালে এরশাদ ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন।
ওই ঘটনার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হওয়ার পর তার উদ্যোগে ভারত থেকে এনে এরশাদকে করা হয় সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান, মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে।
পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদকে জিয়ার এই পদোন্নতি দেওয়া তখন ভালো চোখে দেখেননি মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা।
জিয়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে ‘নির্বিষ’ এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন; কিন্তু সেই এরশাদই তার জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ান বলে বিএনপি নেতারা এখন বলছেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে যে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন, তার পেছনে এরশাদই কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে জিয়ার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ।
ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে তখন হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যার মামলা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বইতে হয়েছে এরশাদকে, যদিও রায় হয়নি।

সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ দেশের প্রথম সেনাপ্রধান এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে (ছবি: সংগৃহীত)
জিয়া নিহত হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন তিনি, স্থগিত করেন সংবিধান।
প্রথমে বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু সব ক্ষমতা ছিল এরশাদেরই হাতে, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদের অনুমোদন ছাড়া কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ ছিল না আহসানউদ্দিনের।
তার এক বছর পর আর রাখঢাক না রেখে আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন এরশাদ; যার এই ক্ষমতারোহণ অবৈধ বলে পরে রায় আসে আদালতের।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছে নূর হোসেনের এই ছবি
ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তার রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’, মৃত্যু পর্যন্ত এই দলটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই।
এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে অবকাঠামোর উন্নতির দিকটিই তার সমর্থকরা বেশি করে দেখান, তবে অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরিতে এরশাদের সেদিকে আগ্রহ ছিল বলে সমালোচকরা বলেন।
উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কৃতিত্ব নেন এরশাদ; কিন্তু তাও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়নের ধাপ হিসেবেই দেখেন সমালোচকরা।

রাষ্ট্রপতি থাকাকালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের এক সম্মেলনে এইচ এম এরশাদ
এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয় বলে সমালোচনা করলেও এরপর সংবিধান সংশোধন হলেও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি কেউ স্পর্শ করতে চাননি।
ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরও নানা পদক্ষেপে বিতর্কিত ছিল এরশাদের ক্ষমতার যুগ। তখন গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল সীমিত।
এর মধ্যেও এরশাদের সময়ে স্বাস্থ্য নীতি প্রশংসা পায় সমালোচকদেরও; তার গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত।
এরশাদের সময়েই ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক, তবে ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েনে তা কখনই কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একের পর এক বিদেশ সফর নিয়েও সমালোচিত ছিলেন এরশাদ।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার কচুক্ষেতে জনসভায় এইচ এম এরশাদ
নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে চাইতেন এরশাদ; ক্ষমতায় থাকার সময় তার তার লেখা কবিতা-গান রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে শোনানো হত, তবে সেগুলো আদতে তার লেখা ছিল কি না, তা নিয়ে ছিল মানুষের সন্দেহ।
দমন-পীড়ন দিয়ে নিজের শাসন বজায় রেখেছিলেন এরশাদ; তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে।
ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দি হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ।
ওই সময় ৪২টির মতো মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে; তাকে বাগে আনতে এই সব মামলাগুলোর ব্যবহারও পরে দেখা গেছে। ওই সব মামলার একটিতে কেবল তার সাজা হয়েছিল।
১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ; দলের নেতৃত্বভার নেন স্ত্রী রওশনের কাছ থেকে।

৬ জানুয়ারি হুইল চেয়ারে করে সংসদ ভবনে গিয়ে সাংসদ হিসেবে শপথ নেন এরশাদ
এরপর বিভিন্ন সময় নানা ভাগ হয় এরশাদের দল। মূল দল নিয়ে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন তিনি। এরপর টানাপড়েন ও নানা অনুযোগ করলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছিই থেকেছিলেন এরশাদ।
২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেন তিনি। এই পদে থেকেই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান ঘটেছে তার।
[এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ফয়সাল আতিক, জয়ন্ত সাহা, কাজী মোবারক হোসেন, সাজিদুল হক, আফতাবুজ্জামান হিরু]
-
কুমিল্লার সাক্কুকে বিএনপি থেকে ‘চিরতরে’ বহিষ্কার
-
সভায় মারধর: ঢাকার কাউন্সিলরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার
-
আসামি ‘ছিনতাইয়ের চেষ্টা’, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্পাদক গ্রেপ্তার
-
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ‘চাঁদাবাজি’, সবুজবাগের ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
-
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক বইয়ে বিএনপির স্বাক্ষর
-
‘টক কথা আর কত, মিষ্টি কথাও বলেন’
-
বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
-
অর্থনীতিতে ‘অশনি সংকেত’ দেখছে বিএনপি
-
কুমিল্লার সাক্কুকে বিএনপি থেকে ‘চিরতরে’ বহিষ্কার
-
আসামি ‘ছিনতাইয়ের চেষ্টা’, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্পাদক গ্রেপ্তার
-
সভায় মারধর: ঢাকার কাউন্সিলরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার
-
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক বইয়ে বিএনপির স্বাক্ষর
-
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ‘চাঁদাবাজি’, সবুজবাগের ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
-
‘টক কথা আর কত, মিষ্টি কথাও বলেন’
সর্বাধিক পঠিত
- তাইজুলের দারুণ লড়াইয়ের পরও ড্র চট্টগ্রাম টেস্ট
- ‘পোশাকে আপত্তি তুলে’ তরুণী লাঞ্ছিত নরসিংদী স্টেশনে
- ‘দল আমার কাছে অনেক কিছু চায়, আমাকে মূল্যবান মনে করে’
- ‘বাংলাদেশে আসলে অভিজ্ঞতার দাম নেই’
- একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীর চিরবিদায়
- ডলারের তেজ খানিকটা কমল
- উল্টে যাওয়া কভার্ডভ্যান সরাতে ৬ ঘণ্টা, ব্যাপক যানজট
- ‘সালিশে ক্ষুব্ধ’: চেয়ারম্যানের ছেলেকে ‘হত্যার পর আত্মহত্যা’
- কুমিল্লার সাক্কুকে বিএনপি থেকে ‘চিরতরে’ বহিষ্কার
- ভূমি সংস্কারে নতুন আইন, জমি রাখা যাবে ৬০ বিঘা