সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, তবু নিঃশেষিত নই: এরশাদ

বিএনপি সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির দায়ে কয়েক বছর কারাবাসের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে বর্ণনা করেছেন দেশের ‘সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত’ রাজনীতিবিদ হিসেবে।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2018, 12:02 PM
Updated : 13 Sept 2018, 03:24 PM

কিন্তু ‘নিঃশেষ’ হয়ে যাননি দাবি করে মানুষের ‘দুঃখ-দুর্দশা লাঘব’ করার সুযোগ চেয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটে জাতীয় পার্টি কাফরুল থানার উদ্যোগে এক সমাবেশে অংশ নেন এরশাদ। 

তিনি বলেন, “এ দেশের রাজনীতিতে আমার চেয়ে নির্যাতিত আর কেউ নেই।”

২৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলে একটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নিঃশেষ হওয়ার কথা, নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা হইনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে এত নির্যাতনের পরেও আমি বেঁচে আছি। নির্যাতনের পরে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না।”

জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আসীন আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে ১৯৮২ সালে সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসা এরশাদ চার বছর পর জাতীয় পার্টি গঠন করেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৭০টির বেশি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।

তিন জোটের আন্দোলনে পতনের পর  বন্দি এরশাদের তিনটি মামলায় সাজার আদেশ হয়; একটিতে তিনি সাজা খাটা শেষ করেন।

নাজিমউদ্দিন সড়কে এখন যে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসর খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দি আছেন, খালেদা জিয়ার শাসনামলে সেখানেই কেটেছে এরশাদের হাজতবাসের দিনগুলো।

ছয় বছর কারাগারে থেকে ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছিল, তাদের কাছে এখনও তিনি গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৯-১৩ মেয়াদে মহাজোট সরকারের শরিক হিসাবে ছিল এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার ও বিরোধী দল- দুই জায়গাতেই জাতীয় পার্টিকে দেখা যাচ্ছে।    

এরশাদ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের ভূমিকায় আছেন, আর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদ। ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই করতে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে তার দল।

কচুক্ষেতের সমাবেশে এরশাদ বলেন, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার এই আসনে তিনি ‘রেকর্ড’ ভোটে জয় পেয়েছিলেন।

সেনানিবাস এলাকায় নিজের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ বেশি দাবি করে এ আসন থেকে আবারও নির্বাচিত হওয়ার আশা প্রকাশ করেন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির সময়ের উন্নয়নের বৃত্তান্ত তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বর্তমান সরকারেরও সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “আজকে পত্রিকার পাতা খোলেন। কোনো সুখবর নাই। রাস্তায় মানুষ মরছে… অথচ সরকার ভ্রুক্ষেপ করছে না।”

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্সের একটি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে এরশাদ বলেন, “বলা হচ্ছে, আমরা নাকি সবচেয়ে বিত্তশালী লোক। এই টাকা এল কোথা থেকে? এই টাকা তো চুরি করা টাকা, যা আপনাদেরই টাকা।”

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ‘অতি ধনী’ মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে বাংলাদেশে।

দেশে কোনো ‘সুশাসন নেই’ এমন অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আমার বয়স হয়েছে। কিন্তু আমি আবার মাঠে নেমেছি। আপনাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে চাই। দেখাতে চাই উন্নয়ন কাকে বলে, সুশাসন কাকে বলে।”

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পরে মাটিকাটা এলাকাতেও গণসংযোগ করেন বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

আরও খবর