রংপুর সিটিতে ভোট: ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভিতে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ’

ভোট হবে ইভিএমে; ৮৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে 'আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার' কথা জানিয়েছেন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2022, 02:55 PM
Updated : 26 Dec 2022, 02:55 PM

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এনে ইভিএমসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছানোর কাজ প্রায় শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকা প্রতিটি কেন্দ্রে নজর রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে; যাতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ৯ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাদের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র। বিএনপি ভোটে না থাকায় দ্বিমুখী লড়াইয়ের কথা বলেছেন স্থানীয়রা।

কুমিল্লা সিটির মতই রংপুরেও ইভিএমে ভোট হচ্ছে; নিরাপত্তা জোরদারে সব কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে এটি দ্বিতীয় সিটি নির্বাচন। ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে জুনে কুমিল্লা সিটিতে ভোট আয়োজন করেছিল এই কমিশন।

এদিকে ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি।

এই ভোটের তদারকির দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের জানান, ৮৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“আমরা সিসিটিভির মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করব। গাইবান্ধা নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। রংপুরে সমস্যা হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এখানেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে,” যোগ করেন তিনি।

মোট ২২৯টি কেন্দ্রে ইতোমধ্যে এক হাজার ৮০৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান রাশেদা।

তিনি বলেন, “নির্বাচন সবাইকে মিলে করতে হবে। প্রার্থীদের আচরণ হবে বিধিমালা অনুযায়ী। আমাদের লোকবল খুব বেশি নয়, তবু আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করব।”

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করলে ইসি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনমতো সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে থাকবে।”

রিটার্নিং অফিসার আব্দুল বাতেনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণে সব প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রতিটি ভোটকক্ষে ইভিএম ও কারিগরি টিম প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার পর এটি তৃতীয় ভোট; সবশেষ ২০১৭ সালে ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্দলীয় ভোট হয়েছিল। ওই বছরের জুনে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় রংপুর।

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ১৯ অগাস্ট থেকে সময় গণনা শুরু; গতবারের প্রথম সভা ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু কোনো সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর, সে অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হচ্ছে।

মেয়র প্রার্থী যারা

হোসেন আরা লুৎফা ডালিয়া- আওয়ামী লীগ- নৌকা

মো. মোস্তাফিজার রহমান- জাতীয় পার্টি- লাঙ্গল

মো. শফিয়ার রহমান- জাসদ- মশাল

মো. আমিরুজ্জামান- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- হাতপাখা

মো. খোরশেদ আলাম- জাকের পার্টি- গোলাপ ফুল

মো. তৌহিদুর রহমান মণ্ডল- খেলাফত মজলিস- দেওয়াল ঘড়ি

মো. আবু রায়হান- বাংলাদেশ কংগ্রেস- ডাব

মো. লতিফুর রহমান- স্বতন্ত্র- হাতি

মো. মেহেদী হাসান- স্বতন্ত্র- হরিণ

ভোটের তথ্য

>> মেয়র পদে ৯ প্রার্থী; ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন প্রার্থী; ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

>> ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন; পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ ও নারী ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।

>> ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ১৩৪৯টি।

>> তফসিল: ৭ নভেম্বর সময়সূচি ঘোষণা। মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর; বাছাই ১ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৮ ডিসেম্বর।

>> রিটার্নিং অফিসার- নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ইসির যুগ্মসচিব আব্দুল বাতেনের সঙ্গে ১১ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার থাকবেন।

>> প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ২২৯ জন; সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এক হাজার ৩৪৯ জন; দুই হাজার ৬৯৮ জন মোট পোলিং অফিসার।

>> গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে চারজন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই/এএসআই ও তিন জন কনস্টেবল), দুই জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে।

>> নির্বাহী হাকিম: প্রতিটি ওয়ার্ডে একজনসহ ৪৭ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে দায়িত্বে নিয়োজিত।

>> বিচারিক হাকিম: ১৬ জন।

>> প্রতিটি কেন্দ্রে ১৪-১৫ জন করে নিরাপত্তা সদস্য।

রংপুর সিটির এক দশক

১৮৬৯ সালের ১ মে গোড়াপত্তন হয় রংপুর পৌরসভার; ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ শহরে তখন ১৫টি ওয়ার্ড ছিল। প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন রংপুরের কালেক্টর ই জি গ্লেজিয়ার। আব্দুর রউফ মানিক সবশেষ পৌরসভা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

২০১২ সালের ২৮ জুন পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে বর্ধিত এলাকার (সাবেক সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে) আরও ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। পৌরসভার আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ২০৩ বর্গকিলোমিটার।

করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কাজী হাসান আহমেদ। ২০১২ সালে মেয়র নির্বাচিত হন শরফুদ্দিন ঝণ্টু এবং ২০১৭ সালে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

আরও পড়ুন-

Also Read: রংপুর সিটি ভোট: ৩৭ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, ৬ স্তরের নিরাপত্তা

Also Read: রংপুর সিটি নির্বাচন: কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছে ভোটের উপকরণ

Also Read: রংপুর সিটি নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ নেই: ইসি রাশেদা সুলতানা

Also Read: রংপুর সিটি নির্বাচন: আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ৫ দিন

Also Read: রংপুর সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ডালিয়ার

Also Read: রংপুর সিটিতে ইভিএমের মক ভোটিং নিয়ে অসন্তোষ জাপা প্রার্থীর