“বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে; না পেলে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন হবে,” বলেন মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম।
Published : 16 Oct 2024, 06:49 PM
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ পরিচিতি পাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে দাফন করা হবে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।
বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে তার ভাই ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন।
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে। জায়গা পেলে সেখানে দাফন করা হবে, না পেলে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন হবে।”
মতিয়া চৌধুরীর চাচাত ভাই জামিল হোসেন পলাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে এখন এটা উপদেষ্টারা দেখবেন।
“মনে হচ্ছে নতুন জায়গা পাওয়া যাবে না, তাই আমরা আপার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন করার জন্য পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে মারা যান মতিয়া চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে মতিয়ার বিয়ে হয়।
ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’।
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাকে দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।
রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারাজীবনই সাধারণ বেশভূষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।