কোণঠাসা অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগ সম্প্রতি মাঠের রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়ে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ ধরনের কর্মসূচি দিয়েছি।
Published : 03 Feb 2025, 08:06 PM
যারা আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, “পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও সাঙ্গপাঙ্গরা অনেক কিছু করতে চাচ্ছেন। তারা লিফলেট বিতরণ করতে চাচ্ছেন।
“যারা লিফলেট বিতরণ করবেন তাদের জন্য কড়া বার্তা, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। লিফলেটের যেসব কথা আছে, তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হুমকিতে ফেলার কথা।এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সোমবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন শফিকুল আলম।
গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর থেকে দলের প্রধান শেখ হাসিনাসহ অনেক শীর্ষ নেতাই দেশের বাইরে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধেরও মামলা হয়েছে।
দেশে যারা আছেন, তারাও আছেন আত্মগোপনে; দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঝুলেছে ডজন ডজন মামলা, গ্রেপ্তার হলেই রিমান্ড; ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রলীগ এখন ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠন।
সব কিছু মিলিয়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগ সম্প্রতি মাঠের রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়ে ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ ধরনের কর্মসূচি দিয়েছি। এর অংশ হিসেবে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারপত্র বিলি করছে দলটি।
এছাড়া ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ; ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ; ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রয়েছে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা ‘অনলাইনে মিথ্যা ও গুজব’ ছড়াচ্ছে অভিযোগ করে শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পতিত স্বৈরাচারকে এখনও প্রধানমন্ত্রী বলছেন। পুরোটা আমরা মনিটরিং করছি। আমাদের কড়া বার্তা হচ্ছে যারা লিফলেট বিতরণ করবে, এ ধরণের কর্মসূচিতে যাবেন তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। আইনের আওতায় আনা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে একজন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তার (মুকিব খান) লিফলেট বিতরণের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা।
জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা বেশ কিছু গ্রেপ্তার করেছি। আমরা শুনেছিলাম, তারা ঢাকায় ৭০টি জায়গায় লিফলেট বিতরণ করবে। কিন্তু আমরা জেনেছি, তিনটা জায়গায় তারা তা করতে চেষ্টা করেছিল, সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“তারা অনলাইনে অনেক কিছু বিতরণ করছে। পালিয়ে গিয়ে এ-ওকে দেয়। ওনাদের কাজই হচ্ছে অনলাইনে। চুরির টাকাতো তাদের ব্যয় করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ওনার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো খতিয়ে দেখছি। প্রত্যেকটা বিষয় খতিয়ে দেখছি।”
গুজব প্রতিরোধে ফেসবুকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “গুজব নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো আমাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা যুদ্ধে নেমেছে। প্রতিদিন তারা মিথ্যা মিথ্যা দিচ্ছে।
“আমাদের ধারণা হচ্ছে, পতিত স্বৈরাচারের যারা বিলিয়ন ডলার বাইরে নিয়ে গেছে, তারা এ কাজগুলো করাচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে বিষয়টি ভারত সরকারকেও জানানোর কথা বলেন প্রেস সচিব।
এসময় সাংবাদিককরা বইমেলার শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ডাস্টবিনের বিষয়েও জানতে চান।
জবাবে প্রেস সচিবের ভাষ্য, “এটাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ট্রল বাহিনী খুবই ন্যক্কারজনকভাবে আমার পরিবারকে টার্গেট করেছে।
“আমরা জানি, তাদের চরিত্র কেমন। অপ্র্যাতাশিত হলেও সত্য, তাদের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বৈঠকও করছেন। বাংলাদেশের ‘কসাইয়ের’ রুচিটা কোথায়, দেখেন। শেখ হাসিনা ‘এ-টিমের’ সঙ্গে বৈঠক করছেন। ‘এ-টিম’ কারও মেয়ের ছবির উপরের গলাটা কেটে পর্নোগ্রাফি ছবি দিয়ে দিচ্ছে। কি ভয়ংকর! তার রুচিটা কোথায় গেছে। আবার আমাদের রুচি শেখান অনেকেই।”
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান শিক্ষা উপদেষ্টা ‘স্পষ্ট’ করেছেন।
তিনি বলেন, “সরকার ওই সিদ্ধান্তে অটল আছে। নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।”
তিতুমীর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে মানুষের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, তা নিয়ে সরকার ‘সচেতন আছে’ বলেও মন্তব্য করেন আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “তাদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। তাদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুক, কথা বলুক, লেখা লেখি করুক। যদি জনমত তৈরির মাধ্যমে দাবিটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। সরকারে থেকে তাদের প্রতি আহ্বান তারা যেন সড়ক বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতের আন্দোলনের বিষয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, “তাদের বিষয়ে সরকার আন্তরিক। তারপরও কারও কারও মধ্যে হতাশা ও অস্থিরতা কাজ করছে। তাদের বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। তাদের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
এছাড়া মানব পাচার বন্ধে সরকারের অনেকগুলো সেল কাজ করছে বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পরেও এ ধরণের কাজ হয়ে যায়। আমরা এটাকে আরও স্টেপআপ করার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশ থেকে কোনভাবে মানবপাচার না হয়।”
পুরনো খবর