‘সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ’ সাজেদা চৌধুরীকে স্মরণ সহযোদ্ধাদের

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “উনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2022, 11:35 AM
Updated : 12 Sept 2022, 11:35 AM

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আওয়ামী লীগে যখন বিপর্যয় নেমে এসেছিল, সেই দুঃসময়ে দলের হাল ধরা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে তার সহযোদ্ধারা স্মরণ করলেন ‘ত্যাগী, সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ’ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বললেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বলেছিল, বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ করা যাবে না। তখন এই সাহসী নেত্রী সাজেদা চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর নাম রেখেই অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।”

রোববার রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংসদ উপনেতা সৈয়দ সাজেদা চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “তার মৃত্যুতে জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হল, আমরা একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে হারালাম এবং আমি হারালাম একজন সত্যিকারের অভিভাবক।”

তরুণ বয়সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া সাজেদা ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।

সে কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “উনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি।”

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর তার সঙ্গেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

জাতীয় সংসদে তিনি ফরিদপুর-২ আসনের (সালথা, নগরকান্দা এবং সদরপুররে কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বহু বছর। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভরসা আর আস্থার স্থান।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ বলেন, “রাজনীতির যে কোনো সমস্যায় আমরা আপার (সাজেদা চৌধুরী) কাছে ছুটে যেতাম এবং তিনি অভিভাবকের মত সুপরামর্শ দিতেন।”

কুমিল্লার শাসনগাছার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ কর্মী ৭৬ বছর বয়সী জোনাব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হলেন, তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের হদিস ছিল না। ওই কঠিন সময়ে সাজেদা চৌধুরী মাঠের অনেক নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতেন। দুর্দিনের নেত্রী ছিলেন তিনি।”

“বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতেও তার অবদান ছিল, যেটা অনেকে বলে না। নেত্রী যখন দেশে আসেন, তার সাথে সর্বক্ষণ থাকতেন তিনি।”

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ১৪ দলীয় জোট রয়েছে, তার সমন্বয়কের ভূমিকাও সাজেদা চৌধুরী পালন করেছেন এক সময়। বর্তমান এই জোটের সমন্বয়ক আমু।

তিনি বলেন, “চৌদ্দ দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন সাজেদা চৌধুরী। তাকে হারানো আওয়ামী লীগের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, এই অভাব পূরণ হওয়ার নয়।”

১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরায় জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বাবা সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ ও মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী যিনি ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর মারা যান।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সাজেদা চৌধুরী রাজনীতির বাইরেও সমাজ সেবামূলক নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেজন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কলকাতায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিতে প্রতিষ্ঠিত ‘গোবরা নার্সিং ক্যাম্পে’ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

১৯৭৪ সালে ইউনেস্কো ফেলোশিপ এবং ওই সময়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সন্মানসূচক ‘সিলভার অ্যালিফ্যান্ট পদক’ দেওয়া হয় তাকে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে উইমেন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন এই রাজনীতিবিদ।

পুরনো খবর

Also Read: সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই

Also Read: সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ফরিদপুরে

Also Read: সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক