সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ফরিদপুরে

“যে কোনো সমস্যায় আমরা আপার কাছে ছুটে যেতাম, তিনি অভিভাবকের মত সুপরামর্শ দিতেন,“ বললেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2022, 05:29 AM
Updated : 12 Sept 2022, 05:29 AM

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথায়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য সংসদে ফরিদপুর-২ আসনের (সালথা, নগরকান্দা এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বহু বছর। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভরসা আর আস্থার স্থান।

তার মৃত্যুতে সালথা ও নগরকান্দা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিদ দলের নেতারা শোক জানিয়েছেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ বলেন, “রাজনীতির যে কোনো সমস্যায় আমরা আপার (সাজেদা চৌধুরী) কাছে ছুটে যেতাম এবং তিনি অভিভাবকের মত সুপরামর্শ দিতেন।”

উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে অগাস্টের শেষ দিকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরী। সেখানেই রোববার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

সোমবার বেলা ১১টায় তার নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দার এম এন একাডেমি স্কুল মাঠে তার জানাজা হবে। বিকাল ৩টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিন রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

আসরের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আরেক দফা জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।

বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশারফ হোসেন মিয়া বলেন, “বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে শুধু তার নির্বাচনী এলাকা বা ফরিদপুরবাসীই নয় দেশ একজন রাজনৈতিক অভিভাবক হারিয়েছে। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।“

মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দলকে সুসংগঠত করতে সাজেদা চৌধুরীর ভূমিকার কথাও স্মরণ করছেন তার দলের কর্মীরা।

নগরকান্দা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া জানান, সাজেদা চৌধুরীর অসুস্থতার কারণে নগরকান্দার আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর সোমবার এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।

ফরিদপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন, সাবেক সংসদ শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কাজী জাফর উল্লাহসহ বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শোক জানিয়েছেন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে।

তরুণ বয়সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া সাজেদা চৌধুরী ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সাজেদা চৌধুরী, তখন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনারও ছিলেন।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাজেদা। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর তার সঙ্গেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

Also Read: সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই

১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯২ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাজেদা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছিলেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সাজেদা চৌধুরীকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।