তার বিশ্লেষণ বলছে,আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৮-১৬৬টি আসন পেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি পেতে পারে ১১৯-১৩৭টি আসন।
Published : 26 Oct 2023, 11:26 PM
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে সংশয় থাকলেও অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাত সেই ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নিশ্চিত।
ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের আগাম ধারণা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মত একক বা যৌথভাবে সরকার গঠন করতে পারে।
আবুল বারকাত বলছেন, আগামী নির্বাচন ও তার ফলাফল নিয়ে নিজ উদ্যোগে গবেষণা করেছেন তিনি। ‘ভোটারের মন ও আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক তার এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে সেই গবেষণার তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটির চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বলেন, ছয় মাস আগে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন।
“এর দায় দায়িত্ব সর্ম্পূণ আমার। আমি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা অর্থনৈতিক সমিতির সঙ্গে এই গবেষণার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু ফলাফল প্রস্তুত ও তুলে ধরতে তারা সহযোগিতা করেছে।"
তিনি বলেন, "এই ফলাফল নির্ভর করছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হল কিনা, তার ওপর। সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য নির্বাচনী মাঠ সমান হওয়ার ওপর।"
ড. বারকাত মনে করছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৮-১৬৬টি আসন পেতে পারে। অন্যদিকে, বিএনপি ১১৯-১৩৭টি এবং অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে। সব দলকেই যে কোনো আসনে জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ তিনটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) একটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) একটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেতেন চার আসনে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপির জোটের বর্জনের মধ্যে ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলো। ১৭টি দলের অংশগ্রহণে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসন পায়। শরিকদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছয়টি, জাসদ (ইনু) পাঁচটি, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু), তরীকত ফেডারেশন দুটি আসন পায়। জাতীয় পার্টি পায় ৩৪টি আসন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপি ও সমমনারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের একটি নতুন মোর্চ গঠন করে এ নির্বাচনে যোগ দেয়। ভোট শেষে আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসনে জয় পায়। জাতীয় পার্টি (জাপা) ২০টি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাসদ দুটি, বিকল্পধারা দুটি, তরীক্বত ফেডারেশন একটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পায়। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপি পাঁচটি এবং গণফোরাম দুটি আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন তিনটি আসনে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বলে আসছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে তারা অংশ নেবে না। তবে বিএনপি ভোটে আসবে ধরে নিয়েই গবেষণা এগিয়েছেন আবুল বারকাত।
এই অর্থনীতিবিদের বিশ্বাস, আগামী নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ হবে।
তিনি বলেন, "আসন্ন নির্বাচন ও অর্থনীতি নিয়ে সবাই চিন্তিত। আমার মধ্যেও অনিশ্চয়তা বোধ কাজ করে। ভোটারের মনের মধ্যে কী আছে? তা অত্যন্ত জটিল। আসন্ন নির্বাচনে সম্ভ্যাব্য ফলাফল যথেষ্ট স্পর্শকাতর।"
মূল গবেষণা ৪১২ পৃষ্ঠা হলেও ৫৮ পৃষ্ঠার তথ্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন বারকাত। তিনি বলেন, সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য ‘মোটামুটি নির্ধারিত’। তার ভাষায়, এ আসনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভিত্তি আসন’ বা ‘সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত আসন’।
ভিত্তি আসনগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৫৫টি এবং বিএনপির ৭০টি করে আসন পেতে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বাকি ১৫টি আসন পেতে পারে জাতীয় পার্টি, জামায়াত, এলডিপি ও বিজেপি।
নির্বাচনে দোদুল্যমান ভোটাররা (কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি যাদের সমর্থন নির্ধারিত নয়) এবার আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রভাব রাখবে বলে মনে করছেন বারকাত।
তিনি বলেন, “তাদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন, নিষেধাজ্ঞা, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি বিবেচনায় থাকবে।”
নিজের বিশ্লেষণে পাওয়া ধারণা তুলে ধরে আবুল বারকাত বলেন, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল বহাল থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জোটবদ্ধ বা এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে জোট হতে পারে জাতীয় পার্টির সাথে।
গবেষণার সঙ্গে ভোটের বাস্তবতা মিলে গেলে বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না বলেই তিনি মনে করছেন। তবে বিএনপির জোটদ্ধভাবে সরকার গঠন করার সম্ভাবনাও তিনি একেবারে নাকচ করছেন না।