কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, তাদের দুই বছর চার মাস মেয়াদে সংসদ, উপজেলা ও সিটি ভোটে ‘জন আস্থা’ বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক সঙ্কট এখনও বিরাজমান থাকায় সংলাপের প্রয়োজন।
Published : 10 Jun 2024, 09:47 PM
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকার ১% ভোটারের সমর্থনের শর্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে রাখবে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে নির্বাচন কমিশনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘আরএফইডি টক’ এ সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে এ কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে বর্তমান কমিশন ২০২৭ সালে বিদায় নেবে। নতুন ইসির অধীনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে। বিধানটি পাস হলে তখন তা কার্যকর হবে।
সিইসি বলেন, “১% সমর্থন তালিকার যে জটিল বিষয়টি ছিল, সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে তুলে নিয়েছি। আগামীতে হয়ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তুলে নেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে করব।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে এ কমিশনের নেওয়া নানা ধরনের কার্যক্রম তুলে ধরেন সিইসি। নির্বাচনী ব্যবস্থায় অনলাইনে মনোনয়ন জমা, ভোটের ফলাফল সংগ্রহে নতুন অ্যাপ চালুর বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।
সবশেষ উপজেলা ভোট ‘প্রায় সহিংসতামুক্ত’ হয়েছে দাবি করে সিইসি বলেন, হয়ত দুজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অতীতের সাথে তুলনা করলে সহিংসতার মাত্রা কমে এসেছে। ৪৬৯টি উপজেলার ভোট শেষ হয়েছে, ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হয়েছে। গড়ে ৩৬.৪৫% ভোট পড়েছে।
তার ভাষ্য, স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থীরা যেন জিতে আসেন, সেজন্যে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন; কিন্তু ‘সফল হতে পারেননি’।
তারপরও নির্বাচনী ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হলফনামায় সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেবে না।
“হলফনামা উন্মুক্ত করার পর সবাই জানতে পারছেন। আমি কাউকে ফৌজদারি মামলায় ফেলব, তদন্ত করে রিপোর্ট করব; এ ধরনের দায়িত্ব আমাদের নেই। আমাদের সক্ষমতাও নেই, সক্ষমতার অভাবও নেই।”
‘ভোটার উপস্থিতির দায় ইসির নয়’
সিইসি বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ইসির কাজ নয়। ইসি তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দ দেবে, এরপর প্রচার করেন প্রার্থীরা। তাদের গ্রহণযোগ্যতা, দক্ষতা, জনগণের সঙ্গে সংযোগের উপর নির্ভর করতে ভোটার উপস্থিতি কেমন হয়। পুরো নির্ভর করবে প্রার্থীদের ওপর।”
তিনি বলেন, “ভোটার উপস্থিতি ১% হতে পারে, ৯৯% হতে পারে। সেটার দায় আমরা নেবে না। প্রার্থীদের প্রচার করতে না দিলে সে কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হলে তার দায় আমাদের ওপর এসে পড়তে পারে। যারা বলে যে ইসির ওপর আস্থা নেই বলে এটা হয়, রাজনীতির উপর পুরোপুরি আস্থা আছে– সেটাও কিন্তু ঠিক না।”
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক যে সম্পর্ক, রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল হলে নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ ‘বাড়তেও পারে’।
রাজনীতিতে ‘সঙ্কট এখনও’
সিইসি বলেন, “রাজনীতিতে কিছু সঙ্কট এখনও রয়ে গেছে। সার্বিক পরিবেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বা পুরোপুরি অনুকূল হয়ে ওঠেনি। এ কারণে উপস্থিতি কম হতে পারে। রাজনৈতিক বৈরিতা ও বিভাজন এখনও রয়েছে।”
রাজনৈতিক সংস্কৃতির এখনও ‘অনেক উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি।
“দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। নির্বাচন হবে কি হবে না; ইসি কিছুদিনের মধ্যে বাতিল হয়ে যাবে, নির্বাচন তো হবেই না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সংশয় ছিল, এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক সঙ্কট এখনও বিরাজমান রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কট, বিতর্ক নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।”
তার ভাষায়, রাজনীতিতে বির্তক, বৈরিতা থাকতে পারে। কিন্তু মৌলিক প্রশ্নে সমঝোতার মাধ্যমে মতৈক্য প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে সংলাপের প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচনের পর ৫ মাস পার হলেও বিরোধের জমাট বরফ এখনও গলতে শুরু করেনি।… তবুও আশাবাদী, সঙ্কটের নিরসন হবে।”
কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আয়োজন করা যায়, তা ‘বিদগ্ধজনদের’ ওপর ছেড়ে দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ (বিএনপি) শেষ পর্যন্ত অংশ নেবে বলে আশাবাদী ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করেছিলাম, অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী সংস্কৃতি আরও বলিষ্ঠ হয়ে উঠবে।”
‘জন আস্থা বেড়েছে’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আমরা নির্বাচনটাকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করার চেষ্টা করেছি কিনা তা জনগণ দেখে। জনগণ দেখে-আমরা কোনো অসততার আশ্রয় গ্রহণ করিনি, কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করিনি; তাহলে জনগণের আস্থা হওয়া উচিত। আস্থা একদিনে গড়ে উঠবে না; ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হতে পারে।”
জন আস্থা বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
“আমরা যে নির্বাচনগুলো করেছি, অতীতের চেয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা সীমিত পরিসরে বেড়েছে। কারণ, সহিংসতা কম হয়েছে, ভোট জালিয়াতি কম হয়েছে এবং কারচুপি কম হয়েছে, ম্যানুপুলেশনের অভিযোগ হয়নি। সকাল সকাল ব্যালট পেপার পাঠিয়েছি।”
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্রে যাবে, ইভিএমের কী হবে?
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে সরকার ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “এনআইডি আমাদের বিষয় নয়। আমাদের বিষয় ছিল ভোটার আইডি, সেটা করতে গিয়ে এনআইডি তৈরি করে ফেলেছি। যেটা দেশের জন্য জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এনআইডি যাবে, অবশ্যই চলে যাবে। কারণ আইন হয়েছে এটা সংসদের ব্যাপার।”
ইভিএম প্রকল্প শিগগিরই বন্ধ হতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল, ভূত আছে, এভাবে বা ওভাবে দিলে ভোট চলে যায় অন্য জায়গাতে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি। ইভিএম প্রযুক্তিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।
“ইভিএম কিন্তু ডেমোক্রেসিকে এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়ক হবে। ইভিএম কী হবে আমি জানি না। তবে আমার এবং আমার সহকর্মীদের সুপারিশ থাকবে ইভিএম এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে দেওয়া, জনগণের আস্থা ইভিএম এর ওপর ফিরিয়ে আনা।”
আরও পড়ুন...
উপজেলার ভোটে বাড়ল জামানত, সহজ হল স্বতন্ত্র প্রার্থিতা
১% ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান পরিবর্তন করা উচিত: আনোয়ার
১% ভোটারের স্বাক্ষর তালিকার হেরফেরে বাদ অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে কারিগরি কমিটি
জন্মের পরই এনআইডি, সংসদে বিল পাস
প্রকট রাজনৈতিক বৈরিতা নিয়ে সামনে এগোনো কঠিন: সিইসি