নয়া পল্টনই চাই, ‘না হলে দায়িত্ব আপনাদের’: ফখরুল

“যে জায়গায় আপনারা দিতে চান সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই-খুব পরিষ্কার কথা,” বলেন মির্জা ফখরুল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 02:09 PM
Updated : 30 Nov 2022, 02:09 PM

ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনেই ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে নিজেদের আগের অবস্থানের কথাই আবার তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়ে দলটির মহাসচিব জানান, কোনোভাবেই তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন না।

সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির আবেদনের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গত মঙ্গলবার ২৬ শর্তে আগামী ১০ ডিসেম্বর দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়।

এর পরদিন বুধবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ নিয়ে কথা বলেন।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গত কয়েকদিনে দলীয় বেশ কয়েকটি সমাবেশ ও সম্মেলন করলেও বিএনপি সেখানে যেতে চাইছে না। সমাবেশের স্থান হিসেবে সেটি তাদের পছন্দ নয় বলে এদিন আবারও জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে জায়গায় আপনারা (সরকার) দিতে চান সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই-খুব পরিষ্কার কথা। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, চর্তুদিকে যাওয়ার রাস্তা নেই। একটা মাত্র গেইট যে গেইট দিয়ে এক-দুই জন মানুষ ঢুকতে পারে, বেরুতে পারে না।”

‘‘তাই আমরা পরিষ্কার করে আবার বলছি, আপনাদের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে এই নয়া পল্টনে আমাদেরকে ১০ তারিখ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা গ্রহণ করুন।”

এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘তা না হলে সকল দায় দায়িত্ব আপনাদের।”

যানজটের কারণে নয়া পল্টনে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টিকে সরকারের ‘খোঁড়া যুক্তি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শনিবার দিন সরকারি ছুটির দিন। সেদিন কোনো রকমের যানবাহনের সেই জট থাকে না।“

নয়া পল্টনে অতীতে বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এখানে জাতীয় সমাবেশ হয়েছে, মহাসমাবেশ হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখানে সভাপতিত্ব করেছেন। ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ হয়েছে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি।”

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘পুলিশের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে’ আয়োজিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গ্রেপ্তার, মামলা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ওই সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না। শেষ রক্ষা কী হয়? আপনারা দেখেছেন স্যাংশন এসেছে। আবার জনগণের স্যাংশন যদি আসে তাহলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে।”

সরকারকে নিজে থেকে সরে দাঁড়াতে আবারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের জনগণের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য, তাদের ভাত, তাদের ভোট, তাদের অধিকারের জন্য আজকে আমরা এই আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে আপনারা অযথা…গত এক মাস ধরে যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার-দমনমূলক কাজ করছেন, সেই কাজগুলো গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়, রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়। আপনাদের জন্যও ভালো নয়।

“আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আবারও বলছি, সেইফ এক্সিটের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এদেশের ইতিহাস আপনাদের জানার কথা।”

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। এখন এটা বিএনপির আন্দোলন নয়, এটা এখন বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলন নয়, এটা শুধু তারেক রহমানের আন্দোলন নয়। এটা সমগ্র জনগণের আন্দোলন, জনগণের মুক্তির আন্দোলন।”

‘গত কয়েক মাসে নদীতে প্রায় সাড়ে তিনশ মরদেহ’ পাওয়া গেছে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রায় ডেড বডি হচ্ছে ইনজুরড অর্থাত তাদের নিহত করা হয়েছে।”

ব্যাংক খাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে পত্রিকায় দেখলাম উনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন, যে লিখিত দেন ব্যাংকে কোথায় গোলমাল।

‘‘আরে সারা ব্যাংকই তো লোপাট। ব্যাংক সব লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছেন, ফোকলা করে দিয়েছেন। এটা আমাদের কথা নয়। যে মিডিয়া তারা কথা বলতে পারে নাম, মুখে তালা দিয়ে রাখে তারা বলছে, যে ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল?”

ওয়াশার এমডিকে নিয়ম ভেঙে বেতনভাতা প্রদান এবং যিনি বেশির ভাগ সময় ‘যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন’- এমন অনিয়মের উদাহরণ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য রাখেন।