“সবাই আছে হালুয়া-রুটির লোভে আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে শুধু ক্ষমতার চিন্তায়”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 08 May 2024, 05:18 PM
দেশে নির্বাচনি ব্যবস্থা ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ দাবি করে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ জন্যই উপজেলা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের ‘আকাল’ দেখা দিয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস পর প্রথম ধাপে ১৩৯টি পৌরসভায় ভোট চলাকালে বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এই আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এসেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসনে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
“আজকে দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। টেলিভিশনগুলোতে দেখাচ্ছে. কেন্দ্রগুলো ‘খা খা’ করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায় নাই।”
কেন এই অবস্থা হল?- এই প্রশ্ন রেখে হাফিজ বলেন, “কেন মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ‘বিলুপ্ত’ হল? কেন দেশে আইনের শাসন নাই? কেন মানুষের মৌলিক অধিকার নাই। কারণ, ভোট ব্যবস্থাকে ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা’।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, কোথায় গেলে সেই সামাজিক মূল্যবোধ? বর্তমান বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসনের কারণে মানবিক মর্যাদা-সাম্য, সামাজিক সুবিচার ‘বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে’ বাংলাদেশ থেকে ।”
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মত মানুষদের আবার প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখ লাগে এই লোককে আমরা ভুলে যেতে বসেছি, তরুণ সমাজ হয়ত তার নামও জানে না।
“অথচ আজকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যদি একজন রোল মডেল খুঁজে বের করে, সেটি হবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই ‘দারিদ্র্য সন্ত্রাসকবলিত, দুর্নীতিগ্রস্ত’ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গণতন্ত্রে উত্তরণ হতে পারে আজকে যদি দেশে এ রকম আরও শত শত জাফরুল্লাহ সৃষ্টি হয়।
“যেহেতু দেশে আমাদের সমাজ আর জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মত ব্যক্তিদেরকে ধারণ করতে পারে না, যেই কারণে আজকে বাংলাদেশের এই দুর্দশা।”
ছাত্র ও তরুণদের সামনে কোনো রোল মডেল আছে?- এই প্রশ্ন রেখে হাফিজ বলেন, “নাই। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পরে একজন ঔপন্যাসিক বাংলাদেশে আছেন? নাই।
“একজন ভালো কবির নাম আপনারা বলতে পারবেন? সাহিত্যিকের নাম বলতে পারবেন? নাই। বাংলাদেশের সমাজ একটা মন্দা সমাজ, নষ্ট সমাজ। রাজনৈতিক অঙ্গন তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
‘আমরা নির্জীব জাতিতে পরিণত হয়েছি’
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোথায় আজকে আমাদের ছাত্রসমাজ, কোথায় আমাদের তরুণেরা, কোথাও কোনো প্রতিবাদ তো দেখি না।
“খোদ আমেরিকাতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আমরা মুসলমান বলে দাবি করি, অথচ আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদ দেখি না।”
বাংলাদেশের সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “গুম-খুন-দুর্নীতির ফলে আমরা একটা নির্জীব জাতিতে পরিণত হয়েছি। এখন আর একাত্তরের মত অগ্নি স্ফুলিঙ্গ দেখা যায় না।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে আফসোস করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, “আমি ছয়শ ছাত্রকে রিক্রুট করেছিলাম আমার ব্যাটালিয়নে। চার মাস ওদেরকে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, এই ছয়শ সৈনিকের মধ্যে একশ জন রণাঙ্গনে জীবন দিয়েছে। দেশ তাদের কাছে কত প্রিয় ছিল!”
দেশ ও সাধারণ মানুষের চিন্তা আর ছাত্র সমাজের মধ্যে নাই বলে মনে করেন হাফিজ। বলেন, “সবাই আছে হালুয়া-রুটির লোভে আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে শুধু ক্ষমতার চিন্তায়; কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে কিংবা কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে।
“এখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্থান কোথায়? এখানে মুক্তিকামী তরুণদের স্থান কোথায়, যে জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি? মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের সেই যুদ্ধ কি ব্যর্থ হয়ে গেল?”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূরও বক্তব্য রাখেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিনী শিরিন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।