সরকার চায় কেউ যেন ‘টু’ শব্দও করতে না পারে: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী।

দেশে ‘গুম-খুনের’ শিকার স্বজনদের কথা বলতেও সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগের দিন শনিবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “এক ভয়ঙ্কর গুমের সরকার, ক্রসফায়ারের সরকার, মানবাধিকার লঙ্ঘেনের সরকার…রাষ্ট্রশক্তি এমনভাবে টিকিয়ে রাখতে চায় যাতে সরকারের অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ যেন টু শব্দও না করতে পারে।”

সকালে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের উদ্যোগে জড়ো হন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়ে এক কিলোমিটারের মত হেঁটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কাছে সমবেত হন তারা।

এই প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “গুম-খুন-ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে সকালে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মান্তিক পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী ‘গুমপন্থি’ পুলিশ সেখানে তাদেরকে দাঁড়াতে দেয়নি। টেনে-হিচড়ে বের করে দিয়েছে। তাদেরকে কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে।”

এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন সাহস-আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করি। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী নাৎসিদের অন্তঃসার শূন্য অপপ্রচারের মায়াজাল ভেদ করে স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অক্লান্ত উদ্যোম অব্যাহত থাকবে।”

গত ৪ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে দাবি করে তার মুক্তি দাবি করেন রিজভী।

‘কারাগারগুলো নিপীড়ন সেল’

নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাদের কারাগারে ‘নাৎসি বাহিনীর কায়দায়’ নিপীড়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রিজভী।

তিনি বলেছেন, “কারাগারে বর্তমানে যে আইজি প্রিজনস আছেন, তিনি বিএনপির সকল বন্দিদের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখতে মৌখিকভাবে সব কারাগারে নির্দেশ দিয়েছেন।

“তিনি কারাগারগুলোতে আরেকটি ‘হিটলারের গ্যাস চেম্বার’ বানিয়েছেন, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প করেছেন। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতনে আজকে বিপর্যস্ত অবস্থা।”

বিএনপি নেতার ভাষ্য, “আত্মীয়-স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও কাপড়-চোপড় দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি মোবাইলে কথা বলা একেবারে সীমিত করা হয়েছে। নিয়ম হয়েছে যে, সপ্তাহে একদিন মোবাইলে আত্বীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। আর ১৫ দিন পর দেখা-সাক্ষাৎ, আগে যা ছিল প্রতি সপ্তাহে।”

রিজভীর অভিযোগ, তিতুমীর কলেজ হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ হোসেন ডিবি পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারের ভেতরে হাঁটাচলা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না। মাথায় আঘাত করার কারণে মাথায় প্রচণ্ডরকম ব্যথা অনুভব করছে এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমতাবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।

“নিয়াজ হোসেনের কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে”, বলেন তিনি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও পাঁচটি মামলায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মুখপাত্র।