সরকারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগ ও ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে তিনি এ কথা বলেন।
Published : 15 Jan 2024, 08:14 PM
নির্বাচনে যেতে সরকারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে তোলা অভিযোগের প্রমাণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বলেছেন, প্রমাণ দিতে পারলে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন।
জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের কোনো লোক যদি বলতে পারে আমি কিংবা চেয়ারম্যান কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি দলের জন্য বা দলকে দেওয়ার জন্য, তাহলে আমি পদত্যাগ করব। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, এগুলো হলো গসিপ।”
তিনি বলেন, “তাদের ভাষ্য, অনেকে ধারণা করেছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে ২৬ সিট তারা ছেড়ে দিয়েছে, শত শত কোটি টাকা দিয়েছে।
“ওদের ব্যাথা হইল আমরা বোধহয় শত শত কোটি টাকা পেয়েছি তাদের দেই নাই। কিন্তু শত শত কোটি টাকা আমাকে কে দেবে? সরকার আমাকে টাকা দেবে কেন? আর সরকার যদি টাকা দেয় তাহলে এটা কি জানার বাকি থাকবে? এটা কি হয়? শত শত কোটি টাকা হজম তো করার মতো মানুষ আমি না।”
চুন্নু বলেন, “যারা বলছে, তারা না বুঝে বলছে, আবেগপ্রবণ হয়ে বলছে। আসলে আমাদের কেউ টাকা দ্য়ে নাই, এমনকি কোনো ব্যবসায়ীও টাকা দেয় নাই।”
এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান ছিল দোদুল্যমান। কখনও নির্বাচনে না আসার কথা বলেছেন দলটির কোনো কোনো নেতা। পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসার বক্তব্যও দিয়েছেন তারা। এমনকি একক শক্তিতে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে সরকার গঠনের স্বপ্নের কথাও বলেছিলেন নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়ে সমঝোতা করে দলটি।
ভোটে শেষ পর্যন্ত জয় পায় ১১টিতে। একটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা দলের এক নেতার কাছে হেরেছে লাঙ্গলের প্রার্থী। বাকি ১৪টিতে লাঙ্গলের প্রার্থীরা হেরেছেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে।
তবে জাতীয় পার্টি কেবল এই ২৬ আসনে লড়াই করেনি। সব মিলিয়ে ২৮২টি আসনে ছিল লাঙ্গলের প্রার্থী। কিন্তু প্রচার চলাকালে এদের মধ্যে ২০ জনের বেশি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তারা দল থেকে আর্থিক বা অন্য সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগও আনেন। এমন কথাও হয়, ২৬টি আসনে সমঝোতা করে বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে জাতীয় পার্টির আসলে কোনো ভাবনা নেই।
শেষ পর্যন্ত ১১টি আসনে জয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের অভিযোগ, ভোট সরকার নিয়ন্ত্রিত ছিল। যেখানে তারা চেয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, বাকি জায়গায় হয়নি।
তার এ বক্তব্যও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদেরই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা এসে বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে জি এম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুর পদত্যাগও দাবি করতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।
তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু দলের প্রার্থীদেরও তা দেওয়া হয়নি।
এমন অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি এদিন বক্তব্যে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড করায় সম্প্রতি দলের কয়েকজনকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গও টানেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। বলেন, “গতকাল যে দুইজনকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে, তারা পাবলিকলি সংগঠনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এটা অমার্জিত কাজ। যার জন্য মাননীয় চেয়ারম্যান তাদেরকে অব্যহতি দিয়েছেন।”
সেন্টু ও ইয়াহইয়াকে অব্যাহতি
জি এম কাদের ও চুন্নুর সমালোচনা করায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার রাতে দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তরের মেয়াদোত্তীর্ণ আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন