তবে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কী না বা রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কী না সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি জয়।
Published : 09 Aug 2024, 03:46 PM
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে, ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ফিরবেন।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে রয়টার্সকে এই নতুন তথ্য জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। যদিও এর আগে ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, তার নিজের বা শেখ পরিবারের কারও রাজনীতিতে ফিরে আসার আর সম্ভাবনা নেই।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কী না বা রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কী না সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি জয়। তবে দেশের এই ‘দুঃসময়ে’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা দেশের মানুষকে ছেড়ে যাবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। এও জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা। চারদিন ধরে দেশ সরকারশূন্য থাকার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস। দেশ পরিচালনায় ইউনূসের সঙ্গী হচ্ছেন ১৬ জন উপদেষ্টা, যাদের কাঁধে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার দায়িত্ব পড়েছে।
তবে শপথ নেওয়ার পরপরই সেই সরকার কতদিনের মধ্যে নির্বাচন দেবে, এই প্রশ্নে উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার করা জরুরি, তারপর নির্বাচন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জয় বলেছেন, “আমার মা চলতি মেয়াদের পরই অবসরে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি বলেছিলাম মা বাংলাদেশে ফিরবেন না। কিন্তু সারাদেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলার পর গত দুই দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতেই হবে। তারপর মা ফিরে আসবেন।”
দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার এই মুহূর্তে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা না থাকার বিষয়টিও ফের নিশ্চিত করেছেন জয়।
তিনি বলেন, “আপাতত তিনি ভারতে থাকছেন।”
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জয়।
এদিকে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য চলে যাবেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেলিড ল্যামির মধ্যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার খবর এসেছে।
ভারতের পূর্ব সীমান্ত ‘নিরাপদ থাকবে না’
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আগামীতে নির্বাচন হলে তাতে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জয় বলেছেন, “আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং আমরা জয়ী হতে পারি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল এবং দেশের আমাদেরই সবচেয়ে বড় সমর্থক রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে হাসিনাপুত্র বলেন, “আমরা কখনই বুঝতে পারিনি যে, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার পরেও পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপের দিকে যাবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই বিএনপি-জামায়াত জোট সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে পারবে না। ”
ভারতকে বাংলাদেশের সবসময়ের ‘মিত্র’ বর্ণনা করে জয় বলেন, “ ভারত যদি তার পূর্ব দিকের আঙিনায় স্থিতিশীলতা চায়, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দ্রুত পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। এবং এ কাজে ভারতেই নেতৃত্ব দিতে হবে।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের পূর্ব সীমান্ত ‘নিরাপদ থাকবে না’ না বলে মন্তব্য করেছেন জয়।
“বিএনপি-জামায়াতের জোট ভারতের জন্য ভালো নাও হতে পারে। কারণ জামায়াত কখনো নিজেকে জঙ্গিবাদ থেকে বাইরে রাখতে পারবে না।”
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়
বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দায়ী করে জয় বলেছেন, “তাদের মদদেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন সজীব ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, “পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এর পেছনে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহ করছি আমি। হামলা ও বিক্ষোভ যা হয়েছে তা অত্যন্ত সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার প্রচেষ্টা ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যত পদক্ষেপই নিক না কেন, তারা পরিস্থিতি আরও খারাপ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল।”
জয় বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার জন্য হামলাকারীরা যেসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো কেবল কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন এবং বিদেশি শক্তি সরবরাহ করে থাকতে পারে।
আন্দোলন-সহিংসতায় সিআইএর মত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা আছে কী না প্রশ্নে জয় বলেন, তার কাছে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।
আওয়ামী লীগ জনগণকে ছেড়ে যাবে না, আমি সক্রিয় আছি
জয়ের ভাষ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কখনই বাংলাদেশের মানুষকে ছেড়ে যাবেন না। আওয়ামী লীগেরও কাউকে ছেড়ে যাবেন না।
বর্তমানে হামলা ও নিপীড়নের শিকার হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন আমরা আমাদের লোকজনদের নিরাপদ রাখতে যা যা করা দরকার তা করতে যাচ্ছি; আমরা তাদের একা ছেড়ে যাব না।
“আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পুরোনো রাজনৈতিক দল। তাই আমরা আমাদের জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি না।”
এর আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিনই বিবিসিকে জয় বলেছিলেন, শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আর ফিরছেন না। এছাড়া ডয়েচে ভেলেকেও বলেছিলেন, তারা বিদেশের মাটিতে বসবাস করার বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তার বা তার বোন সায়েমা ওয়াদেজ পুতুলের এবং শেখ রেহানার সন্তানদেরও বাংলাদেশে ফিরে রাজনীতি বা দলের হাল ধরার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এখন জয় বলছেন, বর্তমান ক্রান্তিকালে দলের স্বার্থে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না।
“বাংলাদেশে গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি বলে দেয় নেতৃত্বের শূন্যতা রয়েছে। দলের স্বার্থে আমাকে সক্রিয় হতে হয়েছে এবং আমি এখন সামনের সারিতে আছি।”
ইউনূসের প্রতি বার্তা
সজীব ওয়াজেদ জয় মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়া শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে যখন নতুন নির্বাচনের আয়োজন করবেন, দেশে রাজনীতিতে একটি ‘সমান ক্ষেত্র’ তৈরি হবে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে রাজনীতির বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তিনি।
ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা পুত্র বলেন, “আপনি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কখনো প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র রাখতে পারবেন না। তার ব্যক্তিগত মতামত যাই হোক না কেন, তিনি বলেছেন যে তিনি ঐক্যের সরকার চান এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান এবং অতীতের ভুলগুলোরও কোনো পুনরাবৃত্তি চান না তিনি।
“আমি আশা করি তিনি তার কথায় সত্যতা বজায় রাখবেন।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়ে ইউনূস আশ্বস্ত করেছেন, ”ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার হবে দেশের সবার সরকার।”
নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের ও নির্ভয়ে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ভারতে শেখ হাসিনা: ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের আলোচনা
আর রাজনীতিতে ফিরবেন না শেখ হাসিনা: বিবিসিকে জয়
দিল্লি থেকে শেখ হাসিনার অন্য কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি: জয়