তবে ল্যামির সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলেননি রণধীর জইসওয়াল।
Published : 08 Aug 2024, 09:15 PM
শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন খবর আসার মধ্যেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আলোচনা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেলিড ল্যামির সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জইসওয়াল নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের কথোপকথন হয়েছে। বাংলাদেশে চলমান ঘটনা নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন।
৫ অগাস্ট তীব্র গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার দিন থেকেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলাবলি হচ্ছে সেখান থেকে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। এর মধ্যেই ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে কথোপকথন সেই গুঞ্জনকেই যেন চাঙ্গা করছে।
তবে ল্যামির সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলেননি রণধীর জইসওয়াল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবারই জানিয়েছিল, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তবে দেশটির আরও কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর আসতে থাকে, যুক্তরাজ্য সরকার তাকে আশ্রয় দিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা। শেখ রেহানারও যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। ফলে সে দেশই শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে বলে বিভন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে যাচ্ছি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
তবে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া, না-চাওয়ার বিষয়ে ভারত বা ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার সহযোগীদের কাছ থেকেও কোনো বক্তব্য আসেনি।
হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, তার মা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাননি। বিভিন্ন দেশে তাদের আত্মীয়-স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোনো এক জায়গায় থেকে বাকিটা জীবন নাতিপুতিদের সঙ্গে কাটাবেন তিনি।
এসব আলোচনার মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর পার্লামেন্টের সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি অবহিত করার সময় বলেছিলেন, স্বল্প সময়ের নোটিশে সেই সময়ের জন্য ভারতে আসা শেখ হাসিনাকে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য সময় দিচ্ছে সরকার।
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর আসতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র বলয়ের পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চায় না। তবে এ বিষয়ে কোন দেশ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি।
শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোন দেশে হচ্ছে, তা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার জয়শঙ্কর ও ল্যামির মধ্যে কথা হল।
শেখ হাসিনার সহযোগীদের ভারত ছাড়ার খবর
তীব্র গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে যাওয়া তার সহযোগীরা সে দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া শুরু করেছেন বলে খবর দিচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়। সব জেলা-উপজেলায় তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে বেশিরভাগ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
একদিকে বিপুল গণআন্দোলন, অন্যদিকে সহিংসতা- এই দুই পরিস্থিতে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে দাঁড়াতে পারেননি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই আত্মগোপনে চলে যান জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতারা।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিমান বাহিনীর পরিবহন উড়োজাহাজে আগরতলা হয়েছে ভারতের দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা। এই বহরে ছিলেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট সহযোগীরা।
ভারত সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সঙ্গে আসা তার টিমের সদস্যরা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। ৫ অগাস্ট বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা গণভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়।
খুব দ্রুত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ায় শেখ হাসিনা এবং তার টিমের সদস্যরা অতিরিক্ত পোশাক ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র আনতে পারেননি, বলছেন ভারতের সরকারি সূত্র।
ইন্ডিয়া টুডে সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে, অন্য কোনো দেশে আশ্রয় না পাওয়া পর্যন্ত ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে সময় দিচ্ছে। তবে তার সঙ্গে দেশ ছেড়ে আসা সহযোগীরা ক্লান্ত, তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের তাদের মানসিক অবসাদ কাটাতে সহযোগিতা করছেন।
শেখ হাসিনার ভারতে পৌঁছানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রথম তার সঙ্গে দেখা করেন। তখন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সে সময়ের অবস্থা ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পর চার দিন ধরে সরকারহীন থাকে বাংলাদেশ, তৈরি হয় সাংবিধানিক সংকট। সংবিধানে অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুযোগ না থাকলেও অন্যান্য দল ও আন্দোলনকারীদের মতামতের ভিত্তিতে সংকটকালে দেশের হাল ধরার জন্য নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠনের কথা দেশের মানুষকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠায় তাতে অংশ নেয় বিভিন্ন দল ও সাধারণ মানুষ। আন্দোলনের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির কারণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফার ডাক দিয়ে অসহযোগ কর্মসূচি দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, আন্দোলন দমনে সেনাপ্রধান অস্বীকৃতি জানানোর পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য।
৫ অগাস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে গণভবন ছাড়েন শেখ হাসিনা। পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবনে ঢুকে উল্লাস করে। ভাঙচুর ও লুটপাট করে উল্লসিত মানুষ।
ভারতে থাকা শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে যখন ভারতীয় গণমাধ্যম সরব, তখন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে।
সাংবিধানিক শূন্যতার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করবে বলে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন।